রোগ নিয়ে বিভিন্ন কথা ও আলাপ এবং আলোচনা - বি পি আর সি হেল্থ সার্ভিস - প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর। বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি।
রোগ
নিয়ে বিভিন্ন কথা ও আলাপ এবং আলোচনা
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি বাংলাদেশ পেইন, ফিজিওথেরাপি এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন সেন্টার এখন আপনাদের সেবায় ঢাকার প্রানকেন্দ্র মালিবাগ মোড় ও পুর্ব নাখালপাড় মোবাইলঃ ০১৬ ৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭ ৩৮৩৯৪৩০৯ হোয়াট্স এ্যাপঃ ০১৩ ১৬১৭৪৩৭১
সুচিপএ
০১. রোগ
সম্পর্কে পারম্ভিক
আলোচনা
০২. রোগ
কাকে বলে? ০৩. রোগ কেন হয়? ০৪. রোগ মানবদেহে কিভাবে হয় ০৫.
রোগ মানবদেহে কিভাবে ছড়ায় ০৬. রোগের প্রকারভেদ ০৭. রোগ কাদের
হয় ০৮. রোগ এর লক্ষন কি কি ০৯. রোগের এর ডায়াগনোসিস কিভাবে করা হয় ১০. রোগের চিকিৎসা কিভাবে করা হয় ১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় ১২. রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ১৩.
কিভাবে শারিরিক সুস্থ ও সজীব থাকা যায় এবং নিজেকে ফিট রাখা যায় ১৪.
রোগ হলে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ১৫. রোগ হলে রোগীর করনীয় কি কি
০১). রোগ সম্পর্কে পারম্ভিক আলোচনাঃ
রোগ
বা ব্যাধি বা অসুস্থতা হল
কোন জীবিত জীব দেহের বা মনের কোনো
অস্বাভাবিকতা, অক্ষমতা বা স্বাস্থ্যহানি। রোগ
মূলত জীবিত জীবদেহে হয়ে থাকে। এই শব্দের বিপরীত
শব্দ সুস্থতা বা আরোগ্য। প্রাণীদেহ
শারীরিক, প্রাকৃতিক,সামাজিক বা পরিবেশগত কারণে
বিভিন্ন ধরনের জীবানু যেমন - ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, ফাঙ্গাস সহ অন্যান্য অনেক
উৎসের মাধ্যমে জীবিত জীব দেহে প্রবেশ করে বা বিভিন্ন কারণে
জীবিত জীব দেহ রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি প্রাণীদেহেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রিয় ভাবে কার্যকর থাকে।
যে
ব্যক্তি বা জীব রোগ
দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে সে হল রোগী
বা অসুস্থ। চিকিৎসা শাস্ত্রে নানা রোগের, বাহ্যিক উপসর্গ বা সিম্প্টম এবং
রোগ নির্ধারণের লক্ষণ বা সাইন ইত্যাদি
দ্বারা রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস, রোগের
উৎপত্তির কারণ বা ইটিওলজি, রোগের
দ্বারা সংঘটিত দেহবিকার বা প্যাথলজি, রোগনিরাময়
বা ট্রিটমেন্ট, ও সুস্থ মানুষের
রোগ হওয়া থেকে পরিত্রাণের উপায় বা প্রোফাইল্যাক্সিস, রোগপ্রতিরোধ ইত্যাদি
চর্চা হয়ে থাকে। যখন কোন বিশেষ রোগের উপসর্গ কেবল মৃদু, পুরোমাত্রায় হয়নি বা সব উপসর্গের
প্রকোপ পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় প্রকাশিত হয়নি তখন এই অবস্থাকে বলে
সাবক্লিনিকাল রোগ বা ডিজিজ। কোন
রোগের কারণ হতে পারে শরীরের বাইরে থেকে আসা সংক্রামক কীটাণু/জীবাণু/জীবাণু অথবা শরীরের ভিতরের কোন কিছুর অভাব (যেমনঃ ভিটামিনের অভাব, ইমিউনিটির অভাব বা ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ) অথবা অসংগতি
(যেমনঃ অতিপ্রতিক্রিয়া বা
অ্যালার্জি বা
অস্বাভাবিকতা যেমন অটোইমিউন রোগ যাতে
আমাদের নিজেদের ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা আমাদেরই
শরীরের কোন অংশকে আক্রমণ করে ইত্যাদি।
বর্তমানের
উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে ফলে সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ জীবন - যাপন সহজ হয়েছে। নীরোগ অটুট ভালো স্বাস্থ্যের সঙ্গে উৎকৃষ্ট জীবনযাপনের অন্য সব উপাদান নিয়েই
সুস্বাস্থ্য। প্রদান করেছে রোগের অন্যান্য নিয়ম অনুযায়়ী় বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন ঔষধ বের হয়েছে কিন্তু কিছু রোগ আছে যা শুধু মাএ ঔষধে সারনো সম্ভব নয়। এর
জন্য প্রয়োজন সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি।
রোগ
বলতে এমন কোনও অবস্থাকে বোঝায় যার ফলে দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়াপদ্ধতিতে ব্যাঘাত ঘটে। এ কারণে রোগগুলিকে
দেহের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা-রক্ষক প্রক্রিয়া সমূহের কর্মবিচ্যুতির সাথে সম্পর্কিত করা হয়।[২] সাধারণত এই
পরিভাষাটি দিয়ে বিশেষ করে সংক্রামক রোগগুলিকে নির্দেশ করা হয়, যেগুলি হল রোগীদের মধ্যে
সুস্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য। কিছু রোগ যেগুলি দেহে রোগসৃষ্টিকারী সংঘটক বা জীবাণুর (যেমন
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, আদ্যপ্রাণী বা প্রোটোজোয়া, বহুকোষীয়
জীব এবং প্রিয়ন নামক লক্ষ্যবিচ্যুত প্রোটিন) উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট হয়। যদি কোনও অণুজীবের সংক্রমণ বা উপনিবেশ স্থাপনের
ফলে সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য স্বাভাবিক ক্রিয়াপদ্ধতিতে ব্যাঘাত না ঘটে বা
না ঘটার সম্ভাবনা থাকে, যেমন অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকসমূহ, কিংবা
কোনও যাত্রী ভাইরাস, তাহলে সেগুলিকে রোগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। এর বিপরীতে কোনও
সংক্রমণ যদি এর পরিস্ফোটন পর্বে
উপসর্গহীন থাকে, কিন্তু পরবর্তীতে উপসর্গ প্রকাশ প্রত্যাশা করা হয়, তাহলে সেই সংক্রমণটিকে রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্য সব ধরনের রোগকে
অসংক্রামক রোগ বলা হয়, যেমন ক্যান্সার বা কর্কটরোগ, হৃদরোগ
ও বংশগত রোগ।
০২). রোগ কাকে বলেঃ
রোগ
বা অসুস্থতা ব্যাপ্ত অর্থে যে কোন শারীরিক
অসুবিধা, বেদনা, দুঃখ বা দুস্থতা বোঝাতে
পারে। এই ব্যাপ্ত অর্থের
মধ্যে কখোনো কখোনো চোট, আঘাত, পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গতা, নানা সিনড্রোম, সংক্রমণ, রোগ ব্যতিরেকে কেবল মৃদু উপসর্গ (যেমন সাব ক্লিনিকাল ডিজিজ), অস্বাভাবিক ব্যবহার, অঙ্গসংস্থানিক গাঠনিক পরিবর্তন বা শারীরবৃত্তীয় অস্বাভাবিকতা
ইত্যাদিকেও একরকম রোগ বলে গণ্য করা যেতে পারে। শারিরীক ছাড়াও মনন, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব ও জীবনযাপনের অনেক
কিছুর অসংগতিকেও এর আওতায় ফেলা
যেতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে রোগজনিত মৃত্যুকে প্রাকৃতিক কারণ ঘটিত মৃত্যু বা স্বাভাবিক মৃত্যু
বলা হয়।
০৩). রোগ কেন হয়ঃ
রোগ
বিভিন্ন কারনে হতে পারে। যার মধ্যে প্রধান কারনগুলি হল সংক্রমন, পরিবেশগত
কারন,
জেনেটিক
কারন ও বংশগত কারন। রোগ
হওয়ার প্রধান কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১.
সংক্রমণ: রোগজীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী মানব
দেহে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সংক্রমণ বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে, যেমন বায়ুবাহিত, জলবাহিত, খাদ্যবাহিত বা সংস্পর্শের মাধ্যমে।
উদাহরণস্বরূপ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কলেরা, টাইফয়েড, এবং ডেঙ্গু জ্বর হল সংক্রামক রোগ।
২.
পরিবেশগত কারণ: দূষিত বায়ু, জল, মাটি, রাসায়নিক পদার্থ, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদি পরিবেশগত কারণও রোগের কারণ হতে পারে। যেমন, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ এবং জলদূষণের কারণে কলেরা, টাইফয়েড এর মতো রোগ
হতে পারে।
৩.
জেনেটিক কারণ: কিছু রোগ বংশগতভাবে পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে। যেমন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি।
৪.
জীবনযাত্রার কারণ: খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ধূমপান, মদ্যপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি জীবনযাত্রার ধরন রোগের উপর প্রভাব ফেলে। যেমন, অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগ হতে পারে। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে। এছাড়া, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে।
৫.
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে সহজে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক পুষ্টি, এবং শরীরচর্চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬.
অন্যান্য কারণ: কিছু রোগ হরমোনজনিত সমস্যা, অটোইমিউন রোগ, বা ক্যান্সারের কারণেও
হতে পারে।
০৪). রোগ মানবদেহে কিভাবে
হয়ঃ
রোগ মানবদেহে বিভিন্ন ভাবে হতে পারে, যার মধ্যে প্রধান কারণগুলি
হল: সংক্রমণ, অপুষ্টি, বংশগত কারণ, এবং পরিবেশগত কারণ। এছাড়াও, কিছু রোগ
শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় গোলযোগের কারণেও হয়ে থাকে। রোগ (Disease) বলতে
শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে ব্যাঘাত বা অসুস্থতাকে বোঝায়। এটি একটি জটিল
প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা
হলো:
১. সংক্রমণ:
v সংক্রামক রোগগুলি হল সেই রোগ যা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে বা
একটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে।
v এগুলো সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, বা পরজীবী দ্বারা
সৃষ্ট হয়।
v
সংক্রমণ বিভিন্নভাবে
ছড়াতে পারে, যেমন:
o বায়ুবাহিত (যেমন ফ্লু বা সাধারণ সর্দি)
o শারীরিক সংস্পর্শ (যেমন ত্বক বা যৌন সংস্পর্শ)
o দূষিত খাদ্য বা জল (যেমন কলেরা)
o
পোকামাকড়ের কামড়
(যেমন ম্যালেরিয়া)
২. অপুষ্টি:
v অপুষ্টির কারণেও রোগ হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন,
খনিজ, প্রোটিন বা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
v অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বা ভুল খাদ্যাভ্যাসও রোগের কারণ হতে
পারে।
৩. বংশগত কারণ:
v কিছু রোগ বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হতে পারে।
v এগুলো জিনের ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে।
v যেমন: সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি।
৪. পরিবেশগত কারণ:
v দূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, বা পরিবেশগত কারণগুলিও রোগের কারণ
হতে পারে।
v যেমন: বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট বা চর্মরোগ হতে পারে।
v আবার, সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে
পারে।
৫. শারীরবৃত্তীয় কারণ:
v কিছু রোগ শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় গোলযোগের কারণে হয়ে থাকে।
v
যেমন: ডায়াবেটিস,
হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি।
v রোগের কারণ এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে আরও জানতে, আপনি এই উৎসগুলি
দেখতে পারেন:
০৫). রোগ মানবদেহে কিভাবে
ছড়ায়ঃ
রোগ মানব
দেহে বিভিন্ন উপায়ে বিস্তার লাভ করতে পারে। সাধারণভাবে, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী, মানুষের
শরীর বা অন্য কোনো
পোষক দেহে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে। এই জীবাণুগুলো বিভিন্ন
মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হতে পারে, যেমন সরাসরি সংস্পর্শ, বায়ুবাহিত মাধ্যম, দূষিত খাদ্য ও পানি, বা
পোকামাকড়ের মাধ্যমে।
রোগ
বিস্তারের প্রধান মাধ্যমগুলো হলো:
সরাসরি সংস্পর্শ:
কোনো সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে, যেমন - স্পর্শ করা, চুম্বন করা, বা যৌন সংসর্গের
মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।
বায়ুবাহিত: হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে
রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং সুস্থ ব্যক্তি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে তা গ্রহণ করে
সংক্রমিত হতে পারে।
দূষিত খাদ্য
ও
পানি:
রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুযুক্ত খাদ্য বা পানি গ্রহণের
মাধ্যমেও রোগ ছড়াতে পারে।
পোকামাকড়ের মাধ্যমে:
মশা, মাছি বা অন্যান্য পোকামাকড়
রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানোর পর সুস্থ ব্যক্তিকে
কামড়ালে রোগ ছড়াতে পারে।
অন্যান্য মাধ্যম:
ইনজেকশনের মাধ্যমে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে, বা মায়ের থেকে
গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে। সংক্রামক
রোগগুলো বিভিন্নভাবে শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগের তীব্রতা ও বিস্তারের ধরন
রোগের কারণের উপর নির্ভর করে।
০৬). রোগের প্রকারভেদঃ
রোগ
প্রধানত চারপ্রকার :
v
সংক্রামক
রোগ ,
v
অভাবজনিত
রোগ,
v
বংশগত
রোগ (বংশাণুবাহিত ও অ-বংশাণুবাহিত),
v
শারীরবৃত্তীয়
রোগ।
রোগ হওয়ার
কারণগুলি
বিভিন্ন
হতে
পারে,
যেমনঃ
v
সংক্রামক
রোগ: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর কারণে সংক্রামক রোগ হয়। এই রোগগুলো একজন
থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে.
v
অসংক্রামক
রোগ: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগগুলি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং সংক্রামক নয়। এগুলি সাধারণত জীবনযাত্রার ধরন, জিনগত কারণ, বা পরিবেশগত কারণের
কারণে হয়ে থাকে.
v
বংশগত
রোগ: কিছু রোগ আছে যা পিতামাতা থেকে
সন্তানের মধ্যে জিনগতভাবে স্থানান্তরিত হয়.
v
মানসিক
রোগ: মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ ইত্যাদি মানসিক রোগ হতে পারে.
v
শারীরিক
আঘাত বা দুর্ঘটনা: আঘাত
বা দুর্ঘটনার কারণেও বিভিন্ন রোগ হতে পারে.
v
বয়স:
কিছু রোগ বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেশি দেখা যায়.
v
জীবনযাত্রার
ধরন: অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ব্যায়াম না করা, ধূমপান,
মদ্যপান ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন রোগ হতে পারে.
v
পরিবেশগত
কারণ: দূষিত বায়ু, জল, বা মাটি থেকেও
রোগ হতে পারে.
রোগাক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, জীবনযাত্রার ধরন, বংশগত কারণ, এবং পরিবেশগত কারণের উপর নির্ভর করে.
০৭). রোগ কাদের হয়ঃ
রোগ মূলত সকল জীবের হতে পারে, তবে মানুষের ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। রোগ বলতে শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে ব্যাঘাত বা অসুস্থতাকে বোঝায়।
এটি শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক কারণে
হতে পারে। বিভিন্ন ধরণের রোগ রয়েছে, যেমন সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, বংশগত রোগ ইত্যাদি।
০৮). রোগ এর লক্ষন কি কিঃ
রোগের
লক্ষণ (Symptoms) হল রোগের প্রকাশিত
শারীরিক বা মানসিক উপসর্গ
যা একজন ব্যক্তি বা রোগী অনুভব করেন, যেমন জ্বর, ব্যথা, বা দুর্বলতা। রোগের
নিদর্শন (Signs) হল রোগের বস্তুনিষ্ঠ
প্রমাণ যা ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট বা
স্বাস্থ্যকর্মী পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, যেমন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ফুসকুড়ি, বা অস্বাভাবিক রক্তচাপ।
রোগের
লক্ষণ এবং উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য:
উপসর্গ
(Symptoms):
এগুলি
হল ব্যক্তির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যা তিনি রোগের
কারণে অনুভব করেন। যেমন - জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি।
লক্ষণ
(Signs):
এগুলি
হল রোগের বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ যা ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট বা স্বাস্থ্যকর্মী পর্যবেক্ষণ
করতে পারেন। যেমন - শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাস, রক্তচাপ
বৃদ্ধি বা হ্রাস, ফুসকুড়ি,
কাশি, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, ইত্যাদি।
উদাহরণস্বরূপ,
যদি কারো জ্বর হয়, তবে জ্বর একটি উপসর্গ যা ব্যক্তি নিজে
অনুভব করেন। কিন্তু, থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করে যদি দেখা যায় যে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশি, তবে এটি একটি লক্ষণ যা ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট বা স্বাস্থ্যকর্মী পর্যবেক্ষণ
করতে পারেন।
রোগের
লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে ডাক্তাররা রোগ নির্ণয় করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন। রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি রোগের
কারণ, তীব্রতা এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
০৯). রোগ এর ডায়াগনোসিস কিভাবে করা হয়ঃ
রোগ
নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস মূলত রোগের কারণ ও প্রকৃতি নির্ধারণের
প্রক্রিয়া। এটি করার জন্য ডাক্তাররা বা চিকিৎসকগন রোগীর
লক্ষণ, শারীরিক পরীক্ষা, এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
রোগের সঠিক কারণ খুঁজে বের করে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।
রোগ
নির্ণয়ের জন্য সাধারণত যে পদক্ষেপগুলো অনুসরণ
করা হয়:
১. ইতিহাস
ও
উপসর্গ
সংগ্রহ:
ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট
প্রথমে
রোগীর কাছ থেকে রোগের লক্ষণ, রোগের শুরু, রোগের ইতিহাস, এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।
২. শারীরিক
পরীক্ষা:
ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট
রোগীর
শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন, যেমন - শরীরের তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, ইত্যাদি পরীক্ষা করেন।
৩. ডায়াগনস্টিক
পরীক্ষা:
প্রয়োজনে ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট বিভিন্ন ধরণের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার পরামর্শ দেন, যেমন - রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এন্ডোস্কোপি, বায়োপসি ইত্যাদি।
৪. রোগ
নির্ণয়:
ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট
পরীক্ষার
ফলাফল এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে রোগের কারণ এবং প্রকৃতি নির্ধারণ করেন।
৫. চিকিৎসা
পরিকল্পনা:
রোগ নির্ণয়ের পর ডাক্তার বা চিকিৎসক বা কনসালটেন্ট রোগের তীব্রতা এবং রোগীর সামগ্রিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করেন।
রোগ
নির্ণয়ের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ সঠিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমেই সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, যা রোগীর দ্রুত
আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
১০). রোগ এর চিকিৎসা কিভাবে করা হয়ঃ
রোগের
চিকিৎসা বিভিন্নভাবে করা যায়, যা রোগের ধরন,
তীব্রতা এবং রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। প্রধানত, চিকিৎসা বলতে রোগের কারণ দূর করা, রোগের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা বা রোগের অগ্রগতি
রোধ করার জন্য প্রদত্ত ব্যবস্থা বোঝায়। এর মধ্যে ওষুধ
সেবন, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচার, পুনর্বাসন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
রোগের
চিকিৎসা সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে করা হয়:
১. রোগ
নির্ণয়:
রোগের সঠিক কারণ এবং প্রকৃতি জানতে রোগ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য রোগের
ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা, এবং বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
২. চিকিৎসা
পদ্ধতি:
চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে নিম্নরুপ
মেডিসিন বা
ওষুধ প্রয়োগ: বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন - অ্যান্টিবায়োটিক (ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের জন্য), ব্যথানাশক, প্রদাহরোধী ওষুধ ইত্যাদি।
অস্ত্রোপচার:
কিছু রোগের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন - অ্যাপেন্ডিসাইটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি।
ফিজিওথেরাপি:
শারীরিক থেরাপি, পেশাগত থেরাপি, স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের থেরাপি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
রি-হ্যাবিলিটেশন
বা পুনর্বাসন: রোগ
বা আঘাত থেকে সেরে ওঠার জন্য পুনর্বাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে রোগীর
কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা যায়। তাকে আবার পুনরায় পুর্বের জায়গায়
প্রতিস্পাপিত করা হয়।
প্রতিরোধমূলক
ব্যবস্থা: রোগ প্রতিরোধ করার জন্য টিকা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩. অন্যান্য
চিকিৎসা: যোগাযোগ
ও কাউন্সেলিং: মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির জন্য কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ।
হোম
কেয়ার: কিছু রোগের জন্য বাড়িতে বিশ্রাম, সঠিক খাবার গ্রহণ এবং অন্যান্য নির্দেশাবলী মেনে চলা প্রয়োজন।
সাপোর্টিভ
কেয়ার: রোগীদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সাপোর্টিভ কেয়ার দেওয়া হয়।
১১). রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বৃদ্ধি করা
যায়ঃ
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity power) বলতে বোঝায় রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু (যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস) এবং অন্যান্য ক্ষতিকর বস্তুর বিরুদ্ধে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি শরীরকে অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপ কমানো খুবই জরুরি।
v
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
v
স্বাস্থ্যকর
খাবার গ্রহণ: ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
v
পর্যাপ্ত
ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা
ঘুমানো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
v
নিয়মিত
ব্যায়াম: প্রতিদিন হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
v
মানসিক
চাপ কমানো: মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগা, ধ্যান বা পছন্দের কাজ
করা যেতে পারে।
v
ভিটামিন
ডি গ্রহণ: পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
v
স্বাস্থ্যকর
অভ্যাস বজায় রাখা: হাত ধোয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
করা ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১২). রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়ঃ
রোগ
প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্য গ্রহণ এর অভ্যাস, পর্যাপ্ত ও প্রশান্তি ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপ, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি। এছাড়াও, রোগের সংক্রমণ এড়াতে রোগের কারণ অনুযায়ী কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন - সঠিক সময়ে টিকা নেওয়া, হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা, এবং হাত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা।
রোগ
প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো:
১. স্বাস্থ্যকর
জীবনযাত্রা:
একটি
সুষম খাদ্য গ্রহণ করা: ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত
ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা
ঘুমানো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সতেজ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
নিয়মিত
ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এর মতো রোগের
ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।.
মানসিক
চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগা, ধ্যান বা পছন্দের কাজ
করা যেতে পারে।
২. রোগের
সংক্রমণ
প্রতিরোধ:
হাতের পরিস্কার
ও পরিচ্ছন্নতা:
খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া উচিত। বাইরে থেকে ঘরে ফিরেও হাত ধোয়া জরুরি।
হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার: হাঁচি বা কাশির সময়
টিস্যু বা বাহুর ভাঁজে
মুখ ঢেকে রাখা উচিত এবং ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত বক্সে ফেলা উচিত।
মাস্ক
ব্যবহার: জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক ব্যবহার করা রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি কমায়।
টিকা
গ্রহণ: রোগের সংক্রমণ এড়াতে রোগের ধরন অনুযায়ী সঠিক সময়ে টিকা নেওয়া উচিত।
৩. পরিবেশগত
পরিচ্ছন্নতা:
দূষণমুক্ত
পরিবেশ: বায়ু, জল এবং মাটি
দূষণমুক্ত রাখা রোগ প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য।
মশা
ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো: মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের
বংশবৃদ্ধি রোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা উচিত।
৪. অন্যান্য
বিষয়:
v
পরিমিত
পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ এবং ধূমপান পরিহার করা।
v
নিয়মিত
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
v
সংক্রামিত
ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
v
খাবারের
আগে এবং পরে হাত ধোয়া।
এই
বিষয়গুলো মেনে চললে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
কারণগত
শ্রেণিবিভাগ
১।
ব্যাকটেরিয়াল: যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, টাইফয়েড, কলেরা।
২।
ভাইরাল: ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা, রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইডস, হাম, রুবেলা।
৩।
ছত্রাকজনিত : বিভিন্ন চর্মরোগ, ছত্রাক জনিত ফুসফুস সংক্রমণ, মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্ক আবরন
সংক্রমণ, মহিলাদের শ্বেতপ্রদর ইত্যাদি।
৪।
প্রোটিনজনিত (প্রিয়ন): ম্যাড কাউ, ক্রুজফিল্ড জ্যাকব।
সংক্রমণ
ঝুঁকি: ডায়াবেটিস রোগী, জন্মগত স্বল্প রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সংক্রমণ ঝুকি বেশি। কিছু রোগেও শরীর এর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
কমে যায়, যেমন এইডস, যক্ষ্মা, কালাজ্বর, ক্যনসার। তাছাড়া অতি ছোট শিশু এবং অতি বৃদ্ধদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
১৩). কিভাবে শারিরিক সুস্থ ও সজীব থাকা যায় এবং নিজেকে ফিট রাখা যায়ঃ
শারীরিক
সুস্থতা ও সজীবতা বজায়
রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
শারীরিক
সুস্থতা ও সজীবতা বজায়
রাখার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
শারিকি
ব্যায়াম:
v
নিয়মিত
ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য
মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন, যেমন দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা।
v
সপ্তাহে
কয়েক দিন শক্তি-বর্ধক ব্যায়াম করুন: যেমন ওজন উত্তোলন, পুশ-আপ, বা স্কোয়াট।
v
নমনীয়তা
ব্যায়াম করুন: যেমন স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম, অথবা তাই চি।
v
ব্যায়ামের
জন্য সময় বের করুন: কাজের সময়সূচীতে ব্যায়াম করার জন্য সময় বের করুন, অথবা কাজের ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি নিন এবং হাঁটাহাঁটি করুন।
খাদ্যাভ্যাস:
v
পরিমিত
ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান: প্রচুর ফল, সবজি, গোটা শস্য, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
v
পর্যাপ্ত
পরিমাণে পানি পান করুন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে শরীরকে সতেজ রাখুন।
v
কম
চিনি, লবণ এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার খান: ফাস্ট ফুড, মিষ্টি পানীয় এবং অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
পর্যাপ্ত
ঘুম:
v
পর্যাপ্ত
পরিমাণে ঘুমান: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা
ঘুমানো শরীরের জন্য জরুরি।
মানসিক
চাপ নিয়ন্ত্রণ:
v
মানসিক
চাপ কমাতে শিখুন: যোগব্যায়াম, ধ্যান অথবা অন্য কোনো শিথিলকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
v
সামাজিক
কার্যকলাপ: বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটান যা মানসিক চাপ
কমাতে সাহায্য করবে।
v
নিজের
জন্য সময় বের করুন: নিজের পছন্দের কাজ করুন যা আপনাকে আনন্দ
দেয়।
এই
পরামর্শগুলো অনুসরণ করে আপনি শারীরিক সুস্থতা ও সজীবতা বজায়
রাখতে পারেন এবং নিজেকে ফিট রাখতে পারেন।
14). রোগ হলে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবেঃ
রোগাক্রান্ত
হলে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে
অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখা, যাতে রোগের বিস্তার না ঘটে, মাস্ক
পরা, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এছাড়াও, রোগের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
রোগাক্রান্ত
হলে যে সতর্কতাগুলো অবলম্বন
করা উচিত:
v
বিচ্ছিন্ন
থাকা:
v
অসুস্থ
ব্যক্তির উচিত অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখা, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বৃদ্ধ, বা অন্য কোনো
রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি।
v
মাস্ক
পরা: হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে
রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, তাই মাস্ক পরলে তা অন্যদের সংক্রমিত
হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
v
হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার: হাঁচি বা কাশির সময়
মুখ ঢেকে রুমাল বা কনুই ব্যবহার
করা উচিত। ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলা উচিত।
v
ঘন
ঘন হাত ধোয়া:
v
সাবান
ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুলে রোগজীবাণু দূর হয়। বাইরে থেকে এসে বা খাওয়ার আগে
ও পরে হাত ধোয়া জরুরি।
v
পর্যাপ্ত
বিশ্রাম: রোগ প্রতিরোধ ও আরোগ্যের জন্য
বিশ্রাম প্রয়োজন।
v
পর্যাপ্ত
পরিমাণে জল পান করা:
শরীরকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা
দরকার।
v
স্বাস্থ্যকর
খাবার গ্রহণ: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
v
চিকিৎসকের
পরামর্শ: রোগের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।
v
অন্যের
সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা:
v
অসুস্থ
অবস্থায় গণপরিবহন এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
v
শ্বাসতন্ত্রের
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:
যেমন
- বাইরে বের হলে মাস্ক পরা এবং ঘরে ফিরে গরম পানির ভাপ নেয়া। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
বলছে , এই সতর্কতাগুলো অবলম্বন
করে রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যেমন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে, তেমনি অন্যদেরও রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।
15). রোগ হলে রোগীর করনীয় কি কিঃ
রোগ
হলে রোগীর কিছু জরুরি করণীয় বিষয় রয়েছে। রোগীকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, ডাক্তারের দেওয়া চিকিৎসা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং
রোগের অবস্থা অনুযায়ী জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হতে পারে। এছাড়াও, রোগের ধরন অনুযায়ী কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
রোগ
হলে রোগীর করণীয় বিষয়গুলো হলো:
১.
ডাক্তারের পরামর্শ:
v
রোগ
নির্ণয়ের জন্য দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
v
রোগের
লক্ষণ ও উপসর্গগুলো ডাক্তারকে
বিস্তারিতভাবে জানানো প্রয়োজন।
v
ডাক্তারের
দেওয়া চিকিৎসা পরিকল্পনা (যেমন: ঔষধ, ফিজিওথেরাপি, বা অন্য কোনো
পদ্ধতি) সঠিকভাবে অনুসরণ করা উচিত।
v
রোগের
অগ্রগতি বা কোনো পরিবর্তন
হলে ডাক্তারকে জানানো উচিত।
২.
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
v
রোগের
ধরন অনুযায়ী বিশ্রাম, সঠিক খাদ্য গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
v
ধূমপান
ও মদ্যপান পরিহার করা উচিত।
v
রোগের
তীব্রতা অনুযায়ী শারীরিক কার্যকলাপ সীমিত করা বা ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী ব্যায়াম করা যেতে পারে।
৩.
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
v
রোগের
কারণ অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
v
যেমন,
সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, হাত ধোয়া, এবং টিকা নেওয়া যেতে পারে।
v
রোগের
পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
৪.
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন:
v
রোগাক্রান্ত
হলে মানসিক চাপ আসতে পারে। তাই, রোগীকে মানসিক সমর্থন দেওয়া এবং প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
v
রোগীকে
আশাবাদী থাকতে উৎসাহিত করা উচিত।
৫.
অন্যান্য বিষয়:
v
রোগের
কারণে আর্থিক সমস্যা হতে পারে। তাই, আর্থিক সহায়তা বা অন্যান্য সুবিধা
পাওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
v
রোগের
কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই, রোগের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার চেষ্টা করা উচিত।
রোগের
চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য, রোগীর পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সকলের সহায়তা প্রয়োজন।
প্রবন্ধটির লেখকঃ
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর
বি
পি টি, এম ডি, এম
পি এইচ, এম ডি এম
আর, পি এইচ ডি
ব্যাক-পেইন ও স্পাইন কেয়ার এন্ড কাইরোপ্রাকটর মেডিসিন ও স্পাইনাল এ্যাডজাস্টমেন্ট, পাবলিক হেল্থ ও নিউট্রিশন এবং ডায়েট কাউন্সেলিং ও ওয়েট লস, ডিজএ্যাবিলিটি ও রি-হ্যাবিলিটেশন এবং এ্যাউয়ারনেস ও কাউন্সেলিং, ফিজিওথেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপি এবং স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিশেষজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট
Comments
Post a Comment