রক্তে কোলেস্টেরল এর কাজ, কোলেস্টেরল এর পরিমান বৃদ্ধির কারন ও পরিমান কমানোর উপায় - বি পি আর সি - প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি
সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এই সু-স্বাস্থ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা। তার মধ্যে একটি হল উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল।
আপনি হাই কোলেস্টেরল এ আক্রান্ত, কীভাবে তা বুঝবেন এবং এতে কী কী খাওয়া উচিত এবং কী কী খাওয়া উচিত নয় সে বিষয়ে বি পি আর সি হেল্থ সার্ভিস এর পাবলিক হেল্থ ও নিউট্রিশন এবং ডায়েট কাউন্সেলিং বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর এর
আর্টিকেলটি পড়ুন।
কোলেস্টেরল কীঃ কোলেস্টেরল প্রাণীদেহের প্রতিটি টিস্যুতে উপস্থিত এক ধরনের ফ্যাট, যা শারীর বৃত্তীয় কাজে প্রয়োজন হয়। কোলেস্টেরল মানুষের রক্তের প্রোটিনের সঙ্গে মিশে লিপোপ্রোটিন তৈরি করে রক্তে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্টেরয়েড জাতীয় উপাদানের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষ ‘ডিসলিপিডেমিয়া’ বা রক্তে অধিক চর্বির সমস্যায় ভুগছেন। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক যে রক্তস্রোত, তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়, যা মাঝে মধ্যে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ বিষয়ে একটু সচেতন হওয়া দরকার।
শরীর দুটি উৎস থেকে কোলেস্টেরল পায়।
১. লিভার নিজেই প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল তৈরি করে।
২. বাকি কোলেস্টেরল আসে প্রাণিজ খাদ্য
থেকে। যেমন—খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, বড় মাছের মাথা, দুধ ইত্যাদি হলো কোলেস্টেরল
সমৃদ্ধ খাবার।
এগুলোতে উপস্থিত স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট শরীরের ক্ষতির কারণ।
কোলেস্টেরল কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল ও টোটাল কোলেস্টেরল।
কোলেস্টেরলের ধরনঃ
কোলেস্টেরল ২ ধরনের। এলডিএল ও এইচডিএল।
এইচডিএল হচ্ছে হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন অর্থাৎ বেশি ঘনত্বযুক্ত লিপোপ্রোটিন শরীরের জন্য উপকারী। এই কোলেস্টেরল আমাদের কোষঝিল্লির তরলতা বজায় রাখে, পিত্তরস তৈরি করে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।
এলডিএল হচ্ছে লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন অর্থাৎ কম ঘনত্বযুক্ত লিপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরল। এটি রক্তবাহী নালীগুলোতে জমে গিয়ে রক্তনালীকে সংকুচিত করে ফেলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
রক্তে লিপোপ্রোটিন অর্থাৎ ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি হলে সেটাকে হাই কোলেস্টেরল বলে। হাই কোলেস্টেরল মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। এটির কারণে হৃদপিণ্ডে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হতে পারে। কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, ওভার ওয়েট এবং ইনঅ্যাকটিভ ফিজিক্যাল লাইফস্টাইল গুরুত্বপূর্ণ।
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু
সালেহ আলমগীর জানান, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল প্রয়োজন। তবে কারো যদি হৃদরোগ থাকে তাহলে অবশ্যই ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল তার জন্য ক্ষতিকর।
কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার কারণ
♦ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস।
♦ কায়িক পরিশ্রম কম করা।
♦ রান্নায় তেলের ব্যবহারে সচেতন না হওয়া; প্রতিদিন ভাজা-পোড়া খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া।
♦ ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন, তামাক সেবন ও কিছু ড্রাগ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির ‘ডিসলিপিডেমিয়া’ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
খাদ্য
তালিকায় যেসব পরিবর্তন আনা উচিত। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন পাবলিক হেল্থ ও
নিউট্রিশন এবং ডায়েট কাউন্সেলিং কনসালটেন্টের পরামর্শ মেনে চলবেন।
কারণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকভাবে বিষয়টিকে ম্যানেজ করতে হয়। তবে কিছু নিয়ম সবার জন্যই প্রযোজ্য। যেমন
♦ অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করা এবং সরল শর্করা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।
পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি খাওয়া।
♦ ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত কাঁচা সবজি, সালাদ বা জুস হিসেবে খাওয়া।
♦ প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০-৪৫-৬০ মিনিট করে হাঁটাচলা বা এক্সারসাইজ করা।
♦ ধূমপান বা অন্যান্য বদ-অভ্যাস থাকলে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা।
♦ রান্নায় তেলের ব্যবহারে সচেতন হওয়া। অতিরিক্ত তেলের খাবার, ভুনা খাবার এড়িয়ে চলা।
♦ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, খাসির মাংস ও দুধ বা দুধজাতীয় খাবার বাদ দেওয়া।
প্রয়োজনে খাদ্য তালিকায় টক দই রাখা যাবে।
♦ তা ছাড়া মিশ্র বাদাম, কাঁচা দেশি রসুন, তেঁতুল ইত্যাদি খাবারও খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই পরিমাণ ও সময় একজন পাবলিক হেল্থ ও নিউট্রিশন এবং ডায়েট কাউন্সেলিং বিশেষজ্ঞ এর
সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।
লিপিড প্রফাইলে ঝামেলা হলে শুরু থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। লাইফস্টাইল ও খাদ্যতালিকা মেনে চললে ডিসলিপিডেমিয়া থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব।
কোলেস্টেরল
বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ
কোলেস্টেরল অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে ঘাম, ক্লান্তি বোধ, দুর্বলতা, ক্ষুধা হ্রাসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া, চোখের ওপর ও নিচে হলুদ রঙের চর্বি জমা হতে পারে মত মোমের মতো। এ ছাড়া যদি কারো হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এথোরোস্কেলেরোসিস হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়, তখন বুকের বাম পাশে ব্যথা, প্রেসার বেড়ে যাওয়া, অথবা পায়ে ব্যথা এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কী
কী খাবার খাবেন
না
হাই কোলেস্টেরল থেকে বাঁচতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। যদি কারো কোলেস্টেরল লেভেল বেড়ে যায় তার স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস, বড় চিংড়ি, অতিরিক্ত তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
কী
কী খাবার খাবেন
সেইসঙ্গে ওমেগা ৩ জাতীয় খাবার যেমন আখরোট, ইলিশ, আঁশ জাতীয় খাবার যেমন শাকসবজি, ডাটা, আপেল, শস্য জাতীয় খাবার যেমন ওটস, লাল আটার রুটি, বার্লি, লাল চাল খাওয়া উচিত। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
উপদেশ
তাছাড়া ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম এইচডিএল কোলেস্টেরল বা 'ভালো কোলেস্টেরল' বাড়াতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস করুন।
About Prof. Dr. Md. Abu Saleh Alamgir
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বি পি টি (মেডিসিন ফ্যাকাল্টি – ঢাকা বিশ্ব
বিদ্যালয়), এম ডি (ফিজিওথেরাপি মেডিসিন –ইন্ডিয়া), এম পি এইচ ( পাবলিক হেল্থ এন্ড
নিউট্রিশন – এ আই ইউ বি), এম ডি এম আর (ডিজএ্যাবিলিটি এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন – ইউ
এন আই সি), পি এইচ ডি (ব্যাক-পেইন এন্ড স্পাইন কেয়ার – আমেরিকা)
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বাংলাদেশের প্রথম
এবং একমাএ ব্যাক-পেইন ও স্পাইন হেয়ার এবং
কাইরোপ্রাকটর, পাবলিক হেল্থ ও নিউট্রিশন এবং ডায়েট কাউন্সেলিং, ডিজএ্যাবিলিটি ও
রি-হ্যাবিলিটেশন এবং ফিজিক্যাল ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সিনিয়র ফিজিওথেরাপি মেডিসিন
কনসালটেন্ট
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর একজন বিশিষ্ট
ব্যাক-পেইন ও পেইন স্পেশালিস্ট, যিনি বিভিন্ন ধরণের সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি প্রয়োগ করে
নতুন, পুরাতন ও দীর্ঘ মেয়াদি বাত – ব্যথা, আর্থ্রাইটিজ ও প্যারালাইসিস রোগীদের
চিকিৎসা করেন।
প্রফেসর
ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর
বি পি
টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি
পাবলিক
হেল্থ ও নিউট্রিশন এবং ডায়েট কাউন্সেলিং বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র
ফিজিওথেরাপি মেডিসিন কনসালটেন্ট
কনসালটেন্ট
ফিজিওথেরাপি এন্ড বিভাগীয় প্রধান
ইসলামী
ব্যাংক হাসপাতাল, মতিঝিল, ঢাকা
Comments
Post a Comment