মানবদেহের মাংশপেশিতে টান পড়ার কারণ ও প্রতিকার এর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি - বি পি আর সি

          মানবদেহের মাংশপেশিতে টান পড়ার কারণ ও প্রতিকার এর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি

মাংশপেশী মানব দেহের একটি গুরুত্বপুর্ন উপাদান যার মাধ্যমে আমরা দেহের বিভিন্ন জোড়ার মুভমেন্ট বা নড়াচড়া করে থাকি। মানবদেহে প্রায় ৭৫০ টি মাংশপেশী রয়েছে। মাংশপেশিতে অতিরিক্ত টান খেলে শরীরের ওই অংশটিতে ভীষণ ব্যথা হয়। এ কারণে মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারন করা যায় না।ফলে মুভমেন্ট বাধাগ্রস্থ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে মাসল পুল, মাসল সোরনেস, স্ট্রেইন, স্প্রেইন,মাসেল ক্র্যাম্প, স্প্যাজম ইত্যাদি বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ল্যাকটিক অ্যাসিড নি:সরণের ফলে ওই জায়গায় জ্বালাপোড়া হয়। 

সবার আগে জানা প্রয়োজন কেন মাংসপেশিতে টান পড়ে। এর প্রধান প্রধান কয়েকটি কারণ হল:


* শরীরের যে কোনো একটি বা একাধিক মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হলে।

* ব্যায়াম, খেলাধূলা বা যে কোনো শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্মআপ বা শরীর গরম না করলে।

* ব্যায়াম, খেলাধূলা বা যে কোনো শারীরিক কসরতের পরএ কুলআপ বা শরীর ঠান্ডা না করলে।

* পেশী ক্লান্ত থাকা অবস্থায় আকস্মিক নড়াচড়া করলে।

* হঠাৎ অতিরিক্ত ভারী কোন বস্তু ওঠালে। অতিরিক্ত গরম এর কারনে ঘাম অতিরিক্ত হলে।

* পেশীর অতিরিক্ত ও অনুপযুক্ত ব্যবহার এর ফলে।

* মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা। অবসাদ গ্রস্থ , শারিরিক ফিটনেস এর অভাব।

* অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, এলোমেলো জীবন যাএা।

* পানি কম খেলে এবং শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মাংসপেশিতে অতিরিক্ত ব্যথা হলে, ব্যথায় জ্বর উঠে গেলে, কয়েকদিন পরও সেই ব্যথা না কমলে, মাংসপেশির ফুলে ওঠা না কমলে বা বাড়লে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, মাথা ঘুরতে থাকলে, শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে কাঁপতে থাকলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে। মাসল পুল হওয়ার পর পেশির ওই অংশ যদি টান টান করতে গিয়ে ব্যথা পান, তাহলে সেই চেষ্টা আর করা যাবে না। এতে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে।

প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষতস্থানে তাৎক্ষণিক ব্যথা কমানোর জন্য এনেস্থেটিক ক্রিম, জেল বা স্প্রে ব্যবহার করা হয়। পরিস্থিতি স্বাপেক্ষে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে মাংস পেশিতে টান পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার তথ্য মতে, মাংসপেশিতে টান খাওয়ার প্রথম কয়েকদিন চারটি ধাপে এর চিকিৎসা করতে হয়। যাকে সংক্ষেপে প্রাইস ফিজিওথেরাপি বলা হয়। এর মাধ্যমে ব্যথা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

প্রিভেনশনঃ এ্যাসিসটিভ ডিভাইছ এর মাধ্যমে আক্রান্ত স্থানটিকে মুভমেন্ট হতে বিরত রাখা

রেস্ট বা বিশ্রাম: এই সময়টাতে সব ধরনের শারীরিক ব্যায়াম বা ক্রিয়াকলাপ বন্ধ রাখতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে কোন ওজনও নেয়া যাবে না।

আইস বা বরফ : আঘাতের স্থানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিটের জন্য বরফের ব্যাগ দিয়ে রাখুন।

কমপ্রেশন সংকোচন : আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটির নাড়াচাড়া নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে।

এলিভেট বা উঁচু করা : অর্থাৎ আঘাতের স্থানটি যতটা সম্ভব বালিশের উপরে উঠিয়ে রাখতে হবে।

এরপরেও কিছু সতর্কতা রয়েছে। আঘাত পাওয়ার প্রথম কয়েকদিন ওই স্থানে গরম সেক বা গরম পানি দেয়া যাবে না। এছাড়া আঘাতের স্থানে কোন অবস্থাতেই মালিশও করা যাবে না।

যখন আপনি ক্ষতস্থানটি স্বাভাবিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারবেন। খুব একটা বেশি ব্যথা নেই। তখন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক কাজ করার চেষ্টা করুন। নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করুন যাতে জয়েন্ট বা পেশী শক্ত না হয়ে যায়।

এবার জেনে নিন কিভাবে মাংসপেশীর টান এড়াবেন:

* যে কোনো শারীরিক কসরতের আগে বা ভারী কিছু তোলার আগে অবশ্যই ওয়ার্মআপ করে মাংসপেশিগুলোকে সচল করে নিন।

* নিয়মিত  শারিরীক ব্যায়াম করুন।

* দীর্ঘক্ষণ না বসে, ২০-৩০ মিনিট বা এক ঘণ্টা পর পর কয়েক মিনিট কিছুক্ষণ পায়চারি করুন।

* প্রচুর পানি পান করুন।



প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর

ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন বিভাগ

আমেরিকা বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল

মালিবাগ মোড়, মালিবাগ, ঢাকা

মোবাইল: ০১৬৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭৩৮৩৯৪৩০৯

Comments

Popular posts from this blog

Prof. Dr. Md. Abu Saleh Alamgir. BPT, MD, MPH, MDMR, PhD. Physiotherapy Medicine & Rehabilitation Consultant

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা এবং স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা- বি পি আর সি

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর। বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি - বি পি আর সি