পারকিনসন্স জনিত রোগে ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা - বি পি আর সি

      পারকিনসন্স জনিত রোগে ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন  চিকিৎসা                        

ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছুঁড়ছেন, কথা বলছেন বা চিৎকার করছেন - এ ধরনের আজগুবি কোনো কাজ করলে, তখন বুঝতে হবে আপনার শরীর পারকিনসন্স রোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে। কোন পূর্বাভাস পেলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে পারকিনসন্স রোগ সম্পর্কে মানুষের ধারণা সেভাবে নেই। ফলে সচেতনতাও গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশে পারকিনসন্স রোগের পরিস্থিতি নিয়ে কোন গবেষণা কখনও হয়নি।

পারকিনসন রোগ হল এক প্রকারের নিউরো-ডিজেনারাটিভ বা স্নায়বিক রোগ বা স্নায়ু-অধঃপতনজনিত রোগ। রোগটি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন: পারকিনসোনিসম বা প্যারালাইসিস এজিট্যান্স বা শেকিং পালসি । এই রোগটি সবচেয়ে পরিচিত নিউরো-ডিজেনারাটিভ রোগের মধ্যে দ্বিতীয়। ধারণা করা হয় যে, মস্তিষ্কের ডোপামিন তৈরির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই রোগ হয়। এই রোগের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হল স্নায়ুতে প্রিসাইনাপ্টিক প্রটিন-এর জমা হওয়া। তাছাড়া প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল ব্রাডিকাইনেশিয়া এবং একাইনেশিয়া , রিজিডিটি এবং ট্রেমর ।

পারকিনসন্স রোগীদের প্রায় ৮৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ জানা যায় না। পাঁচ শতাংশের ক্ষেত্রে জিনগত কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ পূর্বপুরুষের কেউ এই রোগে আক্রান্ত ছিল, তার কাছ থেকে রোগটি এসেছে। এছাড়া দশ শতাংশের মধ্যে পারকিসন্সের লক্ষণ প্রবল থাকে। সেটিকে পারকিনসনিজম বলা হয়। এটি সাধারণত স্ট্রোক, মস্তিস্কে সংক্রমণ, মস্তিস্কে আঘাত এবং উইলসন ডিজিজ-এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে পারকিনসনিজম হয়। তবে কয়েকবছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউটের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা চালিয়ে বলেছেন, মানুষের পেটের ভেতরে পরিপাক নালীতে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া থেকে এই রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

তারা দেখেছেন, এসব ব্যাকটেরিয়া থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যা মস্তিস্কের কিছু অংশকে অত্যন্ত উদ্দীপ্ত করে তোলে। সেকারণে মস্তিস্কের ঐ অংশের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে মস্তিস্কের একটা অংশ ঠিকমতো কাজ বন্ধ করে দেয় এবং এসব স্নায়ুকোষের মৃত্যু হয়।

আর এই পরিস্থিতিতে শরীরে যে অবস্থা হয়, সেটাকে পারকিনসন্স বলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ঐ গবেষকরা।

শ্রেণীবিন্যাস

প্রাইমারী পারকিন্সোনিজম * প্যারালাইসিস এজিট্যান্স বা পারকিনসন রোগ বা ইডিয়প্যাথিক পারকিন্সোনিজম।

সেকেন্ডারি পারকিন্সোনিজম * পোষ্ট-এনকেফালাইটিক = পোষ্ট-এনকেফালাইটিক লিথার্জিকা। * টক্সিন = এম পি টি পি, ম্যাঙ্গানিজ, কার্বন মনোঅক্সাইড। * ড্রাগস বা ঔষধ = রেসারপিন,আলফা মিথাইলডোপা। * টিউমার * ট্রমা

পারকিনসন্স রোগের কারণঃ পারকিনসন্স এর লক্ষণ : এই রোগে আক্রান্ত হলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপসর্গ দৃশ্যমান হয়। প্রথমত: হাত এবং পায়ে কাঁপুনি হয়। দ্বিতীয়ত: শরীরের একপাশের হাত এবং পা স্বাভাবিকের তুলনায় শক্ত হয়ে যায়। তৃতীয়ত: চলাফেরার গতি ধীর হয়ে যায়।

আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে: * কেউ আক্রান্ত হলে শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারায় সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটতে দেখা যাবে। * কণ্ঠ বা কথার স্বর নীচু হতে পারে বা কমে যেতে পারে। * এমনকি চোখের পাতার নড়াচড়াও কমে যেতে পারে। * শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে সমস্যা হওয়ায় আক্রাত ব্যক্তি বার বার পড়ে যেতে পারেন। * এছাড়া হতাশা, উদ্বেগ, উদাসীনতা ঘুম কমে যাওয়া- এধরনের লক্ষণ যেমন দেখা দেয়।কোষ্ঠ কাঠিন্য এবং প্রস্রাব আটকে যাওয়ার মতো সমস্যাও হয়ে থাকে। * ডোপামিন হ্রাস

পারকিনসন্স রোগের উপসর্গ ও লক্ষণঃ প্রাথমিক পূর্বাভাসের ব্যাপারে ডেনমার্কের আরহাস ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা রয়েছে। সেই গবেষণায় জানা যায়, ঘুমের মধ্যে র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরবিডি হতে পারে। কেউ এই আরবিডি'র শিকার হলে তিনি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বসতে পারেন। এছাড়া ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোঁড়া, কথা বলা অথবা চিৎকার করা-এ ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। কারণ আরবিডি'র শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চলনে ভিন্নতা দেখা দেয় এবং সে কারণে মস্তিস্কের কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না।

পারকিনসন্স বেশি হয় কাদের: এই রোগ পুরুষদের বেশি হয়। ৫০ এর বেশি বয়সীদের এই রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। এই রোগ পুরুষদের বেশি হয়। তবে জেনেটিক কারণে হলে অনেক কম বয়সে– ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সেও এই রোগ হতে পারে। তবে জেনেটিক কারণে হলে অনেক কম বয়সে ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সেও এই রোগ হতে পারে। পারকিনসন্স এর গতিধারা কেমন -স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা পারকিনসন্স রোগের গতিধারাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন।

তবে এই রোগ প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা এখনও জানা নেই বলে চিকিৎসকরা বলছেন। রোগ প্রতিরোধ না থাকলেও, রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক কর্মক্ষম রাখার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই। 

মেডিসিন থেরাপিঃ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঔষধের মাধ্যমে তার রোগটিকে একটি পর্যায়ে স্থির রাখতে হবে। যাতে করে রোগটি বাড়তে না পারে।

মেকানিকাল থেরাপিঃ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোগের অবস্থার উপর ভিত্তি করে আই আর আর, ওয়াক্স প্যাক, লো লেভেল স্টিমুলেশন, মাসেল ভ্রাইব্রেটর দেয়া যেতে পারে।

ম্যানুয়াল থেরাপিঃ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্যাসিভ মুভমেন্ট অব দ্যা জয়েন্ট, স্লো প্যাসিভ স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, প্রোগ্রেসিভ স্ট্রেন্থদেনিং এক্সারসাইজ, প্যাসিভ জয়েন্ট মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ, ব্যালেন্স এক্সারসাইজ ইন সিটিং, স্ট্যান্ডিং এন্ড ওয়াকিং, কো-অরডিনেশন এক্সারসাইজ অব দ্যা আপার এন্ড লোয়ার লিম্ব, গেইট রি-এডুকেশন এক্সারসাইজ উইথ কারেকশন অব গেইট ফেইজ, ফাংশনাল রি-এডুকেশন এক্সারসাইজ অব দ্যা আপার এন্ড লোয়ার লিম্ব। 

ম্যানডেটরি এ্যাডভাইছঃ মানসিক টেনশন কমানো, মানসিক সাহস বাড়ানো, সুস্থ হওয়ার আগ্রহ তৈরি করা, স্বাভাবিক কাজ করা, ধীর স্থিরতা বজায় রেথে কাজ করা।

মেনশনেড এ্যাসিসটিভ ডিভাইছঃ ওয়াকিং এইড ব্যবহার করে হাটা, যাতে সাপোর্ট পাওয়া যায়।


কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান

ডিপার্টমেন্ট অব ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন

রয়েল ম্যাক্স হাসপাতাল লিমিটেড, কোনাপাড়া, ডেমরা, ঢাকা

মোবাইলঃ ০১৬৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭৩৮৩৯৪৩০৯

Comments

Popular posts from this blog

Prof. Dr. Md. Abu Saleh Alamgir. BPT, MD, MPH, MDMR, PhD. Physiotherapy Medicine & Rehabilitation Consultant

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা এবং স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা- বি পি আর সি

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর। বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি - বি পি আর সি