মাথা ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা - বি পি আর সি
মাথা ব্যথায় ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা
মাথা মানবদেহের একটি গুরুত্বপুন অঙ্গ। মাথা ভাল থাকলে মন ও শরীর ভাল থাকে। প্রতিটি মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। এমন কোন পরিবার খুজে পাওয়া যাবে না , যে পরিবারে কেউ না কেউ কখনও মাথা ব্যথায় ভুগেননি। মাথা ব্যথা আসলে কোন রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ মাএ। মাথা ব্যথা মাথার ডান ও বাম পাশে বা উভয় পাশেই হতে পারে, মাথা ব্যথা মাথার একটি বিন্দুতে হতে পারে অথবা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অধিকাংশ সময় মাথা ব্যথা তীব্র কিংবা নিস্তেজ হয় এবং কয়েক মিনিট হতে শুরু করে কয়েক দিন পযন্ত হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা ক্ষতিকর নয়। এটি অনেক গুরুতর রোগের ইঙ্গিত বহন করে। মাথা ব্যথা মুখ্য ও গৌণ দুই ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার মাথা ব্যথার উপর নির্ভর করে মাথা ব্যথার নামকরণ করা হয়ে থাকে। কেন মাথা ব্যথা হচ্ছে তার কারণ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে এই ব্যথার সর্ব্বোচ্চ চিকিৎসা সম্ভব।
সাধারনত মাথা ব্যথা দুই ধরনের। যথা:-
১.মুখ্য মাথা ব্যথা:
ক. মাইগ্রেন এর কারনে মাথা ব্যথা: যদি মাথা ব্যথা মাথার একপাশে অবস্থান করে (বাম পাশ বা ডান পাশ) এবং মাথার ধকধকজনিত স্পন্দন অনুভূত হয়, তাহলে এটি মাইগ্রেনের লক্ষণ।
খ. টেনশন হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তাজনিত কারণে আটসাট যন্ত্র মাথার চারদিকে চেপে আছে বলে মনে হয়।
গ.সাইনাস হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: চোখে ও গালে অনুভব করে, তাহলে তা সাইনাস লক্ষণ বলে ধরে নিতে হবে।
ঘ. থান্ডারক্ল্যাপ হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: হঠাৎ মাথার ভিতর বর্জ্রঘাত অনুভূত হয় এবং কমপক্ষে পাঁচ মিনিট থাকে। মাথা ব্যথার প্রকারভেদের মধ্যে এটা বিপদশঙ্কার নির্দেশ করে।
ঙ. ক্লাস্টার হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: যদি অনুভব হয় যে চোখের পিছন থেকে কোন কিছু খোঁচা দিচ্ছে তাহলে তা ক্লাস্টার হেডেকের লক্ষন।
চ. অ্যালার্জি হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: অ্যালার্জি হেডেক সাইনাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও তা ঋতুভিত্তিক হয়ে থাকে এবং অন্য উপসর্গ যেমন: রানি নোজ (ঠান্ডা বা অ্যালর্জির কারণে নাক থেকে তরল আসা), হাঁচি ও ওয়াটার আইজ (অ্যালার্জির কারণে চোখ থেকে পানি নি:সরন)।
ছ. এয়ারপ্লেন হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: আকাশ পথে ভ্রমণের সময় কপাল বা মাথার একপাশে কোন কিছু বিদ্ধ হওয়া বা খোঁচা মারা প্রকৃতির ব্যাথা অনুভব করা।
জ. এক্সারশনাল হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: যদি কাজকর্মের সময় বা পরে তীব্র মাথা ব্যাথা, এক পার্শ্বস্থ মাথা ব্যথা, স্পন্দিত মাথা ব্যথা, একটানা মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাব।
ঞ. সারভিকোজেনিক হেডেক এর কারনে মাথা ব্যথা: ঘাড়সহ মাথা ব্যথা অনুভূত হয়।
২. সেকেন্ডারি বা গৌন মাথা ব্যথা: ব্যথার উৎস যখন মাথার বাইরে থাকে, তখন তাকে সেকেন্ডারি মাথা ব্যথা বলে।যেমন: গ্লুকোমা, দাঁতের সমস্যা, আঘাত।
কারণ: সাইনাস, ক্লান্তি, পানিশূণ্যতা, সঠিক পরিমান ঘুমের অভাব, দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ব্যাথানাশক ঔষধ ব্যবহার বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সর্দি-কাশি, মাথায় আঘাত, টিউমার, ইনফেকশন,দাঁতের রোগ, খুব ঠান্ডা পানীয় খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা, হরমোনের কারণে, চোখের সমস্যার কারণে ইত্যাদি।
লক্ষণ: ক. মাথা ব্যথা। খ. বমি বমি ভাব। গ. মাথা ঘোরানো। ঘ. চোখে অন্ধকার ও ঝাপসা দেখা। ঙ. ঘুমের ব্যঘাত।
রোগ নির্ণয়: ক. এম.আর.আই। খ. সিটিস্ক্যান। গ. এক্স -রে
চিকিৎসা:
১.মেডিকেশন-
ক. ইন্ডোমেথাসিন। খ. প্রোপানোলল। গ. নেপ্রোক্সিন। ঘ. অ্যন্টিডিপ্রেশন ড্রাগ। ঙ. ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট। চ.প্যারাসিটামল ছ. অ্যন্টি এ্যাংজাইটি ড্রাগ
২. ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন
ক. ম্যাসেজ। খ. স্ট্রেচিং ও স্ট্রেনথিং এক্সারসাইজ। গ. হট এন্ড কোল্ড কমপ্রেসন। ঘ. রিলাক্সেশন টেকনিক। ঙ. এরবিক এক্সারসাইজ। চ. টেন্স। ছ. ডাই নিডিলিং। জ. ব্রিদিং এক্সারসাইজ। ঝ. পোসচার কন্ট্রোল এক্সারসাইজ।
উপদেশ:-
১. নিয়মিত ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো। ২. যথেষ্ট পরিমাণ ফল-মূল ও শাকসবজি খাওয়া। ৩. দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা। ৪. ধূমপান, অ্যালকোহল ইত্যাদি পরিহার করা। ৫. দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা। ৬. সঠিক পদ্ধতিতে বালিশ ব্যবহার করা ও পজিশন সঠিক করা। ৭. বিশ্রামে নেওয়া। ৮. মাথা ব্যথা চিকিৎসার জন্য একজন নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অতীব জরুরি। এর প্রধান কারণ হলো একজন ফিজিওথেরাপী চিকিৎসক মাথা ব্যথার ধরন অনুযায়ী রোগীদের বিভিন্ন ধরণের থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন বিভাগ
এ - ওয়ান হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড
Comments
Post a Comment