বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস এ বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা - বি পি আর সি
বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস এ বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বা ফিজিক্যাল থেরাপি চিকিৎসা একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। দন্ত চিকিৎসা বা শল্য চিকিৎসার মতোই এটি একটি চিকিৎসা শাখা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ফিজিওথেরাপির ধারা অনুযায়ী রোগীর রোগ নির্ণয় করেন এবং চিকিৎসা নির্ধারণ করেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মধ্যে মেডিসিন থেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি, ম্যানিপুলেশন বা ম্যানুয়াল থেরাপি বা থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ অন্যতম। তবে সমন্বিত চিকিৎসা বা আইপিএম সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞগণ তাদের বিশেষ জ্ঞান (এক্সপার্টিজ) অনুযায়ী অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, গাইনি , শিশু রোগীর, মাসকিউলো-স্কেলিটাল, জম্মগত বিকলাঙ্গতা, স্পোর্টস ইনজুরি, ব্যাক পেইন ও স্পাইন ইনজুরি, রিউমাটোলজি, জেরিয়াট্রিক বা বয়ো বৃদ্ধ রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ফিজিওথেরাপির উপ-শাখার বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রয়েছেন।
** ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রসারে প্রতিবন্ধকতা
সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় দেশের প্রান্তিক জনগণ সঠিক এবং মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ছাড়া সারা দেশের প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা ভুয়া এবং নিবন্ধনহীন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
যথাযথ সরকারি তদারকি না থাকায় যেখানে-সেখানে ফিজিওথেরাপি সেন্টার গড়ে উঠছে। অনেক ভুয়া ডিগ্রিধারীরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর ফলে প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ মৃত্যুহার বাড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে বিপুল চাহিদার পরও পর্যাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে রোগীরা মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
** ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রসারে করণীয়
সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসম্পন্ন ও কার্যকর চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।
যথাযথ আইন প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা মান ও নিবন্ধনহীন ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং ভুয়া ডিগ্রিধারীদের ফিজিওথেরাপি অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে হবে।
‘এরই পরিপ্রেক্ষিতে যদি গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট, ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপি এবং ফিজিওথেরাপি অ্যাসিস্ট্যান্ট নিবন্ধন নম্বর করার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা পাবে।’
সরকারিভাবে উপজেলা হাসপাতাল থেকে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি পদে নিয়োগ হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ফিজিওথেরাপির সঠিক চিকিৎসা পাবেন।
** এবারের ফিজিওথেরাপি দিবসটির প্রতিপাদ্য ও কর্মসুচি
এবারের ফিজিওথেরাপি দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে অষ্টিও আর্থ্রাইটিজ এর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্য কর চিকিৎসা পদ্ধতি এ ব্যপারে রোগীদের সচেতন করা এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে যাওয়া।
** ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ক্ষেত্র
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা স্বতন্ত্রভাবে চিকিৎসা দেন। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট যেসব রোগ বা সমস্যায় চিকিৎসা দেন, সেগুলো হলো মাস্কুলোস্কেলেটাল ও অর্থোপেডিকস কন্ডিশন, নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুতান্ত্রিক কন্ডিশন, রেসপিরেটরি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কন্ডিশন, পেডিয়াট্রিক বা শিশুদের সমস্যাজনিত কন্ডিশন, স্পোর্টস বা খেলাধুলায় আঘাতজনিত সমস্যা, গা্ইনকলজিক্যাল কন্ডিশন, মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল কন্ডিশন, জেরিয়াট্রিক বা বার্ধক্যজনিত সমস্যা, পেডিয়াট্রিক কেয়ার এবং আর্গোনমিক্যাল উপদেশ।
** বাংলাদেশে কোথায় কোথায় ফিজিওথেরাপি পড়ানো হয়
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭৩ সালে আরআইএইচডি (বর্তমানে নিটোর) ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের (এমবিবিএস ও বিডিএস একই অনুষদের অধিভুক্ত) অধীন স্নাতক ডিগ্রি চালু করা হয়। বর্তমানে নিটোর, সিআরপি, পিপলস ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্সসহ ৭টি ইনস্টিটিউটে ফিজিওথেরাপি গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু রয়েছে।
** দেশে দৈনিক কতজন মানুষের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এবং কতজন চিকিৎসা নেন
আমাদের এই বাংলাদেশে দৈনিক কয়েক লাখ মানুষের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দরকার তার স্বাভাবিক সুস্থতা ও ব্যস্তময় কর্ম জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য। সেই হিসেবে কয়েক হাজার লোক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করছেন। শুধুমাএ সচেতনতা ও রেফার না করার কারনে।
** প্রতিবছর কত সংখ্যক রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেন
স্বাভাবিক ভাবে সারাদেশে দৈনিক এক লক্ষ রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে থাকলে , মাসে রোগীর সংখ্যা দাড়ায় ৩০ লক্ষ। বছরে দাড়ায় ৩ কোটি ৬০ লাখ রোগী।
** ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর দেশের বাইরে যান কতজন
আমরা নুন্যতম ভাবে ধরলে প্রতি বছর আমাদের ফিজিওথেরাপি রোগীর সংখ্যা যদি দিনে ১ লক্ষ করে হয় , তাহলে বছরে দাড়ায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান।
** দেশে ব্যাচেলর ও ডিপ্লোমা পাশ কতজন ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন
দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ব্যাচেলর ও ১০ হাজারের অধিক ডিপ্লোমা পাশ ফিজিওথেরাপিষ্ট রয়েছেন।
** সরকারী বি এস সি ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠানের নাম
শুধু মাএ সরকারী ভাবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমা, অর্থোপেডিক এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন সেন্টার ( নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে কোর্সটি রয়েছে।
** একটা হাসপাতালে গড়ে কতজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক দরকার
এটা নির্ভর করে ঐ হাসপাতালে কি কি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে এবং রোগী ভর্তি রাখার বেড কতগুলো। সেই হিসেবে, একটি হাসপাতালে ৫ জন হতে শুরূ করে ২০/ ৩০ জন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বা আরও বেশী প্রয়োজন হতে পারে।
** ফিজিওথেরাপির বি এস সি ও ডিপ্লোমা কতটা পদ সরকারী হাসপাতালে রয়েছে । কতজন সেবার সাথে সংযুক্ত
ফিজিওথেরাপি বি এস সি বা ব্যাচেলর পদে সারা বাংলাদেশে প্রায় ২৫ টি পদ রয়েছে, সেখানে বর্তমানে আছেন ৫ জন এবং ডিপ্লোমা পদে সারা বাংলাদেশে প্রায় কয়েকশ পদ রয়েছে সেখানে আছে প্রায় ২০-২৫ জন।
** জেলা, উপজেলা সরকারী হাসপাতালে কোন পদে কতজন আছেন
জেলা, উপজেলা সরকারী হাসপাতালে কোন পদে, কোন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নেই। কিন্তু সমাজ কল্যান অধিদপ্তরের আওতায় প্রতিটি জেলায় একজন ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট ও দুইজন ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিষ্ট নিচ্ছেন। উপজেলা পর্যায়ে কোন নিয়োগ নেই।
** ঔষধ ছাড়া শুধু ফিজিওথেরাপি দিয়ে কি রোগ ভাল করা সম্ভব
শুধু যেমন ঔষধ দিয়ে সব রোগ ভাল করা সম্ভব নয়, তেমনি করে শুধু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিয়ে সব রোগ ভাল করা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি ঔষধ এবং ফিজিওথেরাপি মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, তবে অনেক রোগ ভাল করে , রোগীকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেয় সম্ভব।
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর
বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এই ডি
প্রফেসর এন্ড চেয়ারম্যান
ডিপার্টমেন্ট অব ডিজএ্যাবিলিটি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন
দ্যি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ঢাকা
Comments
Post a Comment