পোশ্চারাল ডিফরমিটি জনিত ব্যাক-পেইনে ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা - বি পি আর সি

 পোশ্চারাল ডিফরমিটি জনিত ব্যাক-পেইনে ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা


আল্লাহপাকের সৃষ্টিসমূহের মধ্যে মানবদেহ একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। আর এ মানবদেহের মধ্যে রয়েছে বিস্ময়কর বহু বস্তু। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে নানা প্রকার গবেষণা, আলোচনা ও পর্যালোচনা। আর মানুষের কাছে কষ্টকর শব্দটির নাম হলো পেইন, আর এটি যদি হয় ব্যাক-পেইন তাহলে তো দুর্ভোগের শেষ নেই। 

পোশ্চার শব্দের অর্থ পজিশন বা অবস্থান। ডিফরমিটি শব্দটির অর্থ কোন বস্তুর, তার সঠিক অবস্থান হতে স্থানচ্যুত হওয়া। পোশ্চারাল ডিফরমিটি শব্দটির অর্থ পজিশন বা অবস্থান বা কাঠামোগতভাবে কোন বস্তুর তার নিজস্ব অবস্থান হতে স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়া। ব্যাক-পেইন শব্দটির অর্থ মানবদেহের ব্যাক বা পেছনের দিকে অর্থাৎ মেরুদণ্ড ও তার সঙ্গে সংযুক্ত ডান ও বা পাশের ব্যথাকে বোঝায়। সোজা কথায় মানবদেহের ঘাড়, পিঠ, কোমর ও নিতম্বের পেছনের ব্যথাকে ব্যাক-পেইন বলা হয়। মানবদেহের অবস্থান প্রতিনিয়ত রক্ষা করার জন্য ও রক্ষণাবেক্ষণ বা সঠিকভাবে রাখার জন্য, মানব দেহের মাংসপেশীগুলোকে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হচ্ছে। মাংসপেশী কাজ করছে কখনওবা একাকী, কখনওবা গুচ্ছ আকারে, কখনওবা একত্রিত বা সমষ্টিগতভাবে। আর এ মাংসপেশীসমূহকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এবং মানবদেহের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া করার জন্য প্রতিনিয়ত সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে হাড় বা বোন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, বারসা, টেনডন, ফ্লুয়িডসহ বিভিন্ন স্ট্রাকচার। পোশ্চার সাধারণত দুই প্রকার। অ্যাকটিভ পোশ্চার ও ইন-অ্যাকটিভ পোশ্চার 

একটিভ পোশ্চার আবার দুই প্রকার, স্ট্যাটিক পোশ্চার ও ডায়নামিক পোশ্চার


স্ট্যাটিক পোশ্চার : স্ট্যাটিক  পোশ্চার  হলো মানবদেহের একটি  নির্দিষ্ট অবস্থান বা পোশ্চার। এ অবস্থায় মাংসপেশীসমূহ কাজ করবে কিন্তু মানবদেহের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না বা কোন প্রকার মুভমেন্ট হবে না। যেমন- দাঁড়িয়ে থাকা, বসে থাকা, শুয়ে থাকা, হাঁটু গেড়ে বসা, ঝুলে থাকা ইত্যাদি।


ডায়নামিক পোশ্চার: ডায়নামিক পোশ্চার হলো মানবদেহকে প্রতিনিয়ত এক অবস্থান হতে অন্য অবস্থানে নেয়ার মাধ্যমে তার আগের অবস্থানের পরিবর্তন করা। সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভারসাম্য সঠিকভাবে ও সঠিক অবস্থানে রাখা। যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো, লাফালাফি করা, মাঝে মাঝে ডানে ও বামে মোড় নেয়া ইত্যাদি। এ অবস্থায় মাংসপেশীসমূহ কাজ করবে এবং মানবদেহের অবস্থানের পরিবর্তন হবে।


পোশ্চার সাধারণত যেসব বস্তু দ্বারা মানব শরীরে সঠিকভাবে কাজ করে বা মেইনটেইন হয় তা হলো লিগামেন্ট। লিগামেন্ট হচ্ছে এক প্রকার টিস্যু যা মানবদেহের হাড়সমূহকে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখে সঙ্গে সঙ্গে নড়াচড়ায় সঠিকভাবে সাহায্য করে থাকে।


টেনডন: টেনডন হচ্ছে এক প্রকার ফাইব্রাস টিস্যু যা মাংসপেশীর শুরু ও শেষের অংশে থাকে। যা বিভিন্ন জয়েন্টের মুভমেন্ট বা নড়াচড়ার শুরু ও শেষের কাজ করে থাকে।


মাংশপেশি: মাংশপেশি এক প্রকার কানেকটিভ টিস্যু যা মানব শরীরে নরম অবস্থায় থাকে। এর সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন জয়েন্টের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া হয়ে থাকে।


হাড়: বোন বা হাড় এক প্রকার কানেকটিভ টিস্যু যা মানবদেহে শক্ত অবস্থায় থাকে। এটি মানবদেহের কাঠামো তৈরি করে। এ কাঠামোর ওপর দিয়েই থাকে লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, বারসা, টেনডন, মাংশপেশীসহ অনেক স্ট্রাকচার এবং এগুলোর উপর দিয়ে চামড়া দ্বারা আবৃত করে মানবদেহকে বিভিন্ন রূপ ও স্বাস্থ্যের দ্বারা সাজানো হয়।


ক্যাপসুল: ক্যাপসুল মানবদেহের বিভিন্ন জয়েন্টে থাকে বা অবস্থান করে। ক্যাপসুল মানবদেহের বিভিন্ন জয়েন্টের ফ্রি মুভমেন্ট করতে সহায়তা করে থাকে। এতে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ হলে জয়েন্টের স্বাভাবিক মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।


বারসা: বারসা মানবদেহের টেনো- পেরিঅস্টিয়াল জাংশনে থাকে বা অবস্থান করে। এর কারণেই প্রতিটি জয়েন্টের মুভমেন্টের শুরুটা খুব স্মুথলি হয়ে থাকে ।


পোশ্চারাল ডিফরমিটি কোন রোগ নয় বরং এটি একটি অবস্থা বা কন্ডিশন যা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করে ভাল করা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। এ ব্যাপারে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসককে অবশ্যই হতে হবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। এ ব্যাপারে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন এজন্য যে, এখানে শুধু মাত্র পোশ্চার কারেকশন করলে চলবে না। কেননা, পোশ্চার হলো শুধুমাত্র হাড়ের অবস্থান বা পজিশন। এ হাড়গুলোকে যারা ধরে রাখতে সাহায্য করে, তাদের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ও ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের স্ট্রেন্থ বাড়াতে হবে এবং সর্বোপরি তাদের লোড নেয়ার মতো উপযোগী ও কাজ করার ক্ষমতাশীল করে পূর্বাবস্থায় নিতে হবে। আপাতত দৃষ্টিতে কাজটি সহজ মনে হলেও বাস্তবে কঠিন।

পোশ্চার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। পোশ্চার সাধারণত আমরা দেখে থাকি মানবদেহের মেরুদণ্ডে বা স্পাইনাল কলামে বা ভার্টিব্রাল কলামে। কিন্তু সারা দেহের পোশ্চার আমাদের দেখতে হয়। কিন্তু চিকিৎসার জন্য আমরা দেখি শুধুমাত্র স্পাইনাল কলামের পোশ্চার বা পজিশন। স্পাইনাল কলামের পোশ্চার পরিবর্তন হয়ে গেলে একে আমরা বলি পোশ্চারাল ডিফরমিটি। এটি সাধারণত কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন: কাইফোটিক ডিফরমিটি বা কাইফোটিক পোশ্চার, লরডোটিক ডিফরমিটি বা লরডোটিক পোশ্চার, স্কোলিয়োটিক ডিফরমিটি বা স্কোলিয়োটিক পোশ্চার, লরডো- স্কোলিয়োটিক ডিফরমিটি বা লরডো- স্কোলিয়োটিক পোশ্চার এবং কাইফো- স্কোলিয়োটিক ডিফরমিটি বা কাইফো- স্কোলিয়োটিক পোশ্চার।


পরামর্শ: কারও যদি পোশ্চরাল জনিত ব্যাক পেইন হয়ে থাকে বা এ প্রকার সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি প্রয়োজন। এতে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেয়া হলে সুস্থতা তা খুবই সহজ। কেননা, ভুল চিকিৎসা আপনার রোগের জটিলতা বাড়িয়ে দিয়ে, আপনার সুস্থ জীবনকে ব্যাহত করে তুলবে।


প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর

বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি

কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপিস্ট ও বিভাগীয় প্রধান

ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন বিভাগ

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মতিঝিল, ঢাকা

মোবাইলঃ ০১৬৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭৩৮৩৯৪৩০৯

Comments

Popular posts from this blog

Prof. Dr. Md. Abu Saleh Alamgir. BPT, MD, MPH, MDMR, PhD. Physiotherapy Medicine & Rehabilitation Consultant

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা এবং স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা- বি পি আর সি

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর। বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি - বি পি আর সি