ডিস্ক প্রলাপ্সজনিত কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা - বি পি আর সি
ডিস্ক প্রলাপ্সজনিত কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা
পিএলআইডি’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রলাপ্স লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। প্রলাপ্স শব্দের অর্থ হচ্ছে সরে যাওয়া, লাম্বার শব্দের অর্থ হচ্ছে কোমড়, ইন্টার শব্দের অর্থ হচ্ছে মাঝ খানের, ভার্টিব্রা শব্দের অর্থ হচ্ছে মেরুদন্ডের হাড়সমূহ এবং ডিস্ক শব্দের অর্থ হচ্ছে কুশন। সুতরাং প্রলাপ্স লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক এর অর্থ হচ্ছে কোমড়ে অবস্থিত হাড় সমূহের মাঝের ডিস্কের স্থানচ্যুতি।
ডিস্ক বা কুশন মানবদেহের মেরুদন্ডের দুই হাড়ের মাঝে অবস্থান করে। মানবদেহের মেরুদন্ড লম্বায় পুরুষের ক্ষেত্রে ৭০ সেমি এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৬০ সেমি। মানবদেহের মেরুদন্ডে ৩৩টি ভার্টিব্রা থাকে। দুই ভার্টিব্রার মাঝে থাকে একটি করে ডিস্ক বা কুশন। সেক্রাম ও কক্রিস হল ফিউজড বোন। ফলে এখানে কোন প্রকার ডিস্ক থাকে না। ডিস্ক বা কুশন মানবদেহের মেরুদন্ডের মাঝে অবস্থান করে যে সকল কাজ করে থাকে তা হচ্ছে:-
১. মানব দেহের নড়াচড়া বা মুভমেন্টের সময় মেরুদন্ডের হাড়সমুহের ফ্রিকশন বা ঘর্ষণ প্রতিরোধ করে
২. প্রচন্ড প্রেসারের সময় ঐ এলাকার শক্ এ্যাবজরবার হিসাবে কাজ করে।
৩. এরা প্রতিটি ভারটিব্রার মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ নড়া-চড়ায় সাহায্য করে থাকে।
৪. অতিরিক্ত নড়াচড়া কোমড়কে ক্ষতির হাত হতে রক্ষা করে।
৫. মানব দেহের প্রতিদিনের স্বাভাবিক নড়াচড়ায় সহয়তা করে।
ডিস্ক দুটি উপাদান দিয়ে তৈরি। যেমন- নিউক্লিয়াসপালপোসাস ও এ্যানুলাসফাইব্রোসাস। নিউক্লিয়াসপালপোসাস এর উন্নতি সাধিত হয় নোটোকর্ড হতে এবং এ্যানুলাসফাইব্রোসাস এর উন্নতি সাধিত হয় মেজোডার্ম হতে, যা নোটোকর্ড এর চারপাশে থাকে।
ডিস্ক প্রলাপ্স: ডিস্ক শব্দের অর্থ হচ্ছে কুশন এবং প্রলাপ্স শব্দের অর্থ হচ্ছে সরে যাওয়া। ডিস্ক প্রলাপ্স বলতে বুঝায় ডিস্ক বা কুশন এর স্থানচ্যুত হওয়া বা সরে যাওয়াকে।
ডিস্ক প্রলাপ্স কোথায় কোথায় হয়ে থাকে: ডিস্ক প্রলাপ্স সাধারনত: মানবদেহের মেরুদন্ডে হয়ে থাকে।
তবে এটি মেরুদন্ডের ঘাড় ও কোমড়ের অংশে বেশি হয়ে থাকে। পিঠে ডিস্ক প্রলাপ্স হওয়ার পরিমাণ খুবই কম,
কেননা পিঠের সম্মুখভাগ বার জোড়ারিব বা হাড় দিয়ে খাচা তৈরি করে, যাকে আমরা বুকের খাচা বলে থাকি। বুকের সম্মুখভাগে খাচা হওয়ার কারণে এর নড়াচড়ার পরিমাণ খুবই কম। পাছা ও তার নিচের অংশে ডিস্ক প্রলাপ্স হয় না, কারণ সেগুলো ফিউজড্ বোন বা হাড় দ্বারা তৈরি। এখানে কোন ডিস্ক থাকে না।
কারণ বা কি জন্য হয়ে থাকে
১. কোমড়ে অতিরিক্ত প্রেসার বা চাপের কারণে। যেমন- রোড ট্রাফিক এ্যাকসিডেন্ট
২.হঠাৎ ভারি কোনো বস্তু তুলতে গিয়ে, ওভার লোডের কারণে- যেমন চাউল বা আটার বস্তা বহন করার সময় সঠিক নিয়ম না মানা বা হঠাত্ নিচু হতে ভারী কোন বস্তু সঠিক নিয়মে না টেনে মাথায় তোলার কারণে
৩. কোমড়ের লিগামেন্ট সমূহের সঠিক কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে- যেমন সঠিক নিয়মে না বসা বা দাঁড়ানোর কারণে হতে পারে।
৪. কোমড়ে অবস্থিত মাংশপেশী-সমূহের শক্তি বা সাপোর্ট কমে যাওয়ার কারণে- যেমন প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি কাজ করার জন্য।
৫. কোমড়ের মাংশপেশীসমূহের টাইটনেসের জন্য বা সংকোচনের জন্য
৬. কোমড়ের টেনডনের ওভার স্ট্রেচ বা টানলাগার কারণে।
৭. আঘাতজনিত কারণে
৮. কোমড়ের বিভিন্ন উপাদানের সঠিক পুষ্টির কারণে
৯. ডিস্কের ক্ষয়জনিত কারণে -যেমন বয়সজনিত কারণে বা অপুষ্টির কারণে
১০. ডিস্কের চারপাশের সামগ্রিক সাপোর্ট কমে যাওয়ার কারণে
১১. কোমড়ের বিভিন্ন স্ট্রাকচারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে
১২. কোমড়ের কোনো বস্তুর স্থানচ্যুতির কারণেও হতে পারে।
কাদের হতে পারে- ডিস্ক প্রলাপ্স সাধারণত ২০ হতে ৫০ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেএে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার হার নারীদের তুলনায় বেশি।
লক্ষনসমূহ কি কি
@ কোমড়ে ব্যথা অনুভব করা
@ ব্যথা কোমড় হতে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পরা
@ ব্যথার কারণে রোগী কিছুক্ষণ হাটার পর রোগীর পা অসার বা বন্ধ হয়ে আসে
@ শোয়া অবস্থায় ব্যথার তীব্রতা কম থাকে
@ বসে থাকলে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে
@ দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথার তীব্রতা বসার চেয়ে বেশি অনুভব হওয়া
@ হাটতে শুরু করলে, কিছুক্ষন পর ব্যথার কারণে রোগীর পা অসার হয়ে বন্ধ হয়ে আসে এবং রোগী বসে পড়তে বাধ্য হয়।
@ মাঝে মাঝে পায়ের ব্যথার স্থানসমূহে জ্বালা পোড়া অনুভব হতে পারে
@ ব্যথা কোমড় হতে পায়ের দিকে ঝিরঝির করে বা কখনও কখনও মনে হয় পিপড়ার মত কিছু হেটে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে বা কখনও কখনও মনে হয় কাটা দিয়ে খোচানোর মত ব্যথা হচ্ছে বা কখনও কখনও মনে হয় পা অবশ হয়ে আসছে বা যাচ্ছে বা কখনও কখনও মনে হয় চাবুক মারার মত ব্যথা হচ্ছে।
কিভাবে নির্ণয় করা যায়
@ এ জন্য সাধারণত আমরা রোগীর আক্রান্ত স্থানের একটি ডিজিটাল এক্সরে ও এমআরআই করে থাকি, যা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে
@ এছাড়া রক্তের সিপিকে ও সিআরপি এবং ব্লাড সুগার টেষ্ট করা যায় রোগের উপর ভিত্তি করে।
@ একজন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিত্সক রোগীর
অবস্থার উপর ভিত্তি করে তার ফিজিক্যাল টেস্ট করে রোগের এবং রোগীর সমস্ত কিছু বের করতে পারেন।
চিকিত্সা পদ্ধতি: চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে নিম্নরুপ: যা নির্ভরক রবে রোগীর রোগের অবস্থার উপর মেডিসিন থেরাপি: এনএসএআইডি ড্রাগ, এ্যান্টিআলসারেন্ট ড্রাগ, মাসেল রিলাক্রজেন্ট ড্রাগ, ভিটামিন যুক্ত ড্রাগ, টেনশন ফ্রি ড্রাগ, ভিটামিন বি১+৬+১২ যুক্ত ড্রাগ দেয়া যেতে পারে রোগের অবস্থার উপর ভিত্তি করে।
মেকানিক্যালথেরাপি:লাম্বার ট্রাকশন, ইউএসটি, প্যারাফিনওয়াক্র, ইনফ্রা রেডিয়েডিয়েশন, টেন্স, লেজার, শর্ট ওয়েভডায়াথারমি, আইএফটি দেয়া যেতে পারে রোগের অবস্থার উপর ভিত্তি করে।
ম্যানুয়ালথেরাপি:মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ, ম্যাকেনজি টেকনিক, ম্যানুয়াল থেরাপি, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, স্ট্রেন্থদেনিং এক্সারসাইজ, ম্যাসাজ, আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ, হোল্ডরিলাক্স এক্সারসাইজ, স্টাটিক এক্সারসাইজ, ম্যানিপুলেশন ইত্যাদি যা নির্ভর করবে রোগের অবস্থার উপর। এছাড়া আকুপ্রেসার ও রিফলেক্রোলজি চিকিত্সা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ম্যানডেটরি এ্যাডভাইস
@ সামনে ঝুকে আপাতত কোন কাজ করবেন না
@ সামনে ঝুকে নিচু হয়ে কোন বস্তু তুলবেন না
@ ভারী কোন বস্তু এক হাতে বহন করবেন না
@ বেশী সময় বসে বা দাড়িয়ে থাকবেন না
Comments
Post a Comment