ঈদ উল আযহার দিন এবং পরবর্তী সময় ব্যাক পেইন মুক্ত থাকুন - বি পি আর সি

                           ঈদ উল আযহার দিন এবং পরবর্তী সময় ব্যাক পেইন মুক্ত থাকুন


ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসব। ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব এই ঈদ উল আজহার আনন্দকে আরও মাতিয়ে তুলতে চাই  শারিরিক সুস্থতা ও ব্যাক পেইন মুক্ত স্বাভাবিক জীবন।


ঘাড়, পিঠ থেকে কোমর  হয়ে নিতম্ব ও লেজে  যে কোনো কারণে ব্যথা হতে পারে। যা ‘ব্যাক পেইন’ নামে পরিচিত। এই ব্যথা যে শুধু বয়স হলেই হয়, তা নয়। এ অসুখের জন্য নানান কারণ থাকতে পারে।


০১. ঈদের দিন বিভিন্ন পজিশনে নড়াচড়ার কারনে হতে পারে ব্যাক পেইন

*  যখন আমরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন আমাদের মেরুদন্ডে চাপ পড়ে ১০০ কেজি। 

* যখন আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াই এবং সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন আমাদের মেরুদন্ডে প্রেশারের পরিমাণ ১৫০ কেজি।

*  যখন কোনো বস্তু সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ানো অবস্থায় কোন বস্তু তোলার চেষ্টা করি, তখন মেরুদন্ডে প্রেশারের পরিমাণ ২২০ কেজি।

*  যখন আমরা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদন্ডে প্রেশারের পরিমাণ ১৪০ কেজি। 

* যখন আমরা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন আমাদের মেরুদন্ডে ১৮৫ কেজি প্রেশার পড়ে।

*  আমাদের মেরুদন্ডে সবচেয়ে বেশি প্রেশার পড়ে, যখন আমরা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় ২০ ডিগ্রি সামনে ঝুঁকে ২০ কেজি ওজনের কোনো বস্তু হাত দিয়ে টেনে তুলি, তখন মেরুদন্ডে প্রেশারের পরিমাণ ২৭৫ কেজি।


০২. এছাড়া  অপুষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত পুষ্টি কখনও কখনও শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়। বেশি খাবার খেলে তা শরীরে শুধুমাত্র বর্জ্য বাড়ানো ছাড়া বাড়তি কোনো উপকারে আসে না। যারা খুব বেশি মাংস খেতে পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কারণ মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত প্রোটিনের ফলে শরীরের ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরের জয়েন্টগুলোতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে তখন বিভিন্ন গিরা ফুলে যায় ও সেখানে ব্যথা করে। এটা গেঁটে বাত বা রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস নামে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের আথ্রাইটিস সেই সঙ্গে ক্যালসিয়ামের অভাবে ‘ব্যাকপেইন’ দেখা যেতে পারে।


০৩. ব্যাকপেইন যে কোনো বয়সের যে কারও হতে পারে। কোথাও পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত, বার্ধক্য, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, পুষ্টির অভাব, অতিপুষ্টি এরকম আরও কিছু কারণে ব্যাকপেইন হতে পারে। ব্যাকপেইন হলে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় ব্যথা প্রকাশ পেতে পারে। ৪০ পেরনো মহিলাদের ব্যাকপেইনের ঝুঁকি বেশি। এর পেছনে কতগুলো কারণ আছে। যেমন শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, ঝুঁকে কাজ করা, মাতৃত্বকালীন সময়, ভারী জিনিস ওঠানো, পুষ্টির অভাব। এছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও মেরুদন্ডে ব্যথা দেখা দিতে পারে।


ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে বয়স্ক মানুষের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা দেখা দেয়। কোমরের হাড় সরে যাওয়া, মেরুদণ্ডে হাড় ক্ষয় বা বৃদ্ধি, ওজন বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের আথ্রাইটিসের কারণে কোমরে ও ঘাড়ে ব্যথা দেখা যেতে পারে।


ঈদের দিনঃ


* গরুর রক্ত পানি দিয়ে পরিস্কার করতে ঝাড়ু দেওয়ার সময় যদি ছোট ঝাড়ু ব্যবহার করা হয় তখন বেশি ঝুঁকতে হয়। ঝাড়ু ছোট হলে তা ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে কোমর ও মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে।


* অতিরিক্ত পানি বালতিতে করে নিয়ে গরুর রক্ত ধোয়ার সময় বারবার ঝুকা ও টেনে তোলার সময় মেরুদন্ডে চাপ পরার কারনে ব্যাক পেইন হতে পারে।


* গরুর পা টেনে এক জায়গা হতে বহন করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া বা ঝুলানোর সময় ব্যাক পেইন হতে পারে। দির্ঘ সময় গরুর ভুরি কাটার কারনে। দির্ঘ সময় বসে মাংশ কাটাকুটির ফলে ব্যাক পেইন হতে পারে।

সামনে ঝুকে অনেক্ষন কাজ করার কারনে ব্যাক পেইন হতে পারে।


* চেয়ারে বসার সময় বেশিক্ষণ সামনের ‍দিকে ঝুঁকে বসলেও কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে। চেয়ারে বসতে হবে মেরুদণ্ড ও ঘাড় সোজা রেখে। দির্ঘ  সময় বসে তদারকির কারনে ঈদের দিন আপনার মেরুদন্ডে ব্যথা হতে পারে।


* ঈদের সময় খাবারের তালিকায় রাখুন পুষ্টিকর শাকসবজি। ছোট মাছের কাঁটা ও মুরগির হাড়ে থাকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম। তাই এসব খাওয়ার অভ্যাস করুন। শিশুদেরও ছোট মাছ খেতে উৎসাহিত করুন।


* অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি মানসিক চাপ বাড়লেও ব্যাকপেইন হতে পারে। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে রুটিন অনুসারে কাজ করুন। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো কিংবা অন্য কোনো ধরনের ব্যয়াম নিয়মিত চর্চায় ব্যাকপেইনের ঝুঁকি কমে। শরীরের ওজন যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।


ব্যথা কমাতে ব্যায়াম খুবই কার্যকর। যদি মেরুদন্ডে ব্যথা হতে হয়ে  থাকে তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে শক্ত কোনো বিছানায় বা মেঝেতে মাদুর বা ম্যাট বিছিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে থাকা। প্রতিদিন ১৫ মিনিটের এই ব্যায়াম পিঠ ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে। 


গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ‘রিলাক্সেশন’ বা বিনোদনের মধ্যে থাকা ও ‘মেডিটেশন’ বা ধ্যান চর্চায় ‘ব্যাকপেইন’ ও ‘স্ট্রেস’ বা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। মেডিটেশনের ফলে শরীরের মাংসপেশীগুলো শিথিল হয়, এতে ব্যথা উপশম হয় ।


মানসিক চাপ যুক্ত পেশা, দুশ্চিন্তা ও ধূমপানের ফলে যে ‘ব্যাকপেইন’ হয় তা দূর করতে ওষুধের প্রয়োজন নেই। মানসিক চাপ কমাতে রুটিন করে কাজ করুন। ধূমপানের কারণেও ‘ব্যাকপেইন’ হয়। তাই এই অভ্যাস থাকলে বর্জন করুন।


ব্যথা বেশি হলে তাড়াতাড়ি একজন ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্টের পরামর্শ নিন।


ঈদুল আজহা পরবর্তী সময় ব্যাক পেইনঃ


ঈদুল আজহা পরবর্তী সময়ে আমাদের খাবার মেন্যুতে প্রাধান্য পায় মাংসের বিভিন্ন আইটেম। কোরবানি পরবর্তী বেশ অনেকদিন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের বিরিয়ানি, রেজালা আর কাবাবের উপস্থিতি থাকে বেশি প্রতিদিনের মেন্যুতে। মাংস তো অবশ্যই খেতে হবে, কিন্তু তার সঙ্গে কিছু সাধারন নিয়ম মেনে চলাও প্রয়োজন। কারণ কোরবানির রেড মিট (গরু ও খাসির মাংস) একবারে বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। তাই সুস্থতার খাতিরে ঈদ পরবর্তী সময়ে মানতে হবে কিছু সাধারণ নিয়ম।


* খাবারের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখুন বা অতিরিক্ত খাবার খাবেন নাঃ

সামনে রাখা বিরিয়ানি বা রেজালা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে খেয়েই যাচ্ছেন হয়তো। খাওয়ার সময় খুব ভাল লাগলেও খাওয়ার পর একসাথে এত তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না অনেকেই। শুরু হয় পেট ফাঁপা, ব্যথা, জ্বালাপোড়া সহ বিভিন্ন ধরণের পেটের সমস্যা। তাই নজর রাখুন কতটা খাচ্ছেন সেদিকে।


* যতটা সম্ভব চর্বি এড়িয়ে চলুন বা কম খাবার চেষ্টা করুনঃ

গরু বা খাসির মগজ, ভুঁড়ি বা চর্বির বিভিন্ন আইটেম দেখতে যতই লোভনীয় লাগুক না কেন, নজর ফিরিয়ে নিন অন্য কোন আইটেমের দিকে। যত কঠিনই লাগুক না কেন, এই সচেতনতার সুফল আপনি অবশ্যই পাবেন।


* সবজির কিছু আইটেম রাখুন মেন্যুতে পাশাপাশি সালাদ খানঃ

ভাবছেন মাংসের এত আইটেম রেখে সবজি খাব? বাদ দিয়ে নয়, বরং সাথে খাবেন যাতে করে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া না হয়। সবজির কিছু নতুন আইটেম রান্না করতে পারেন। এতে করে খাওয়ার আগ্রহ যেমন থাকবে, হজমের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও দূরে থাকতে পারবেন।


* ডায়েটে রাখুন গ্রিন টি, ব্ল্যাক কফি ও গরম পানি+ লেবুপানিঃ

দাওয়াত তো চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবেন না। তাই দাওয়াত থেকে ফেরার পর মেটাবলিজম বাড়াতে পান করে নিতে পারেন ব্ল্যাক কফি বা গ্রিন টি। সকালে ঘুম ভেঙেই হালকা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করুন।


* শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেবেন না

নিয়মিত রুটিন খানিকটা হলেও ধরে রাখুন ঈদের মাঝেও। দিনে ২০ মিনিট হাঁটুন। সাথে নিজেই করুন ঘরের কাজগুলো। এতে করে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে না।


* পরিমিত বিশ্রাম গ্রহন করুনঃ

দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা বিশ্রামের অভ্যেস করুন।             


 প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর                            

প্রফেসর এন্ড চেয়ারম‍্যান              

ডিপার্টমেন্ট অব ডিজএ‍্যাবিলিটি এন্ড রিহ‍্যাবিলিটেশন                        

 দ‍্যি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, উত্তরা, ঢাকা                              

 মোবাইলঃ 01641576787, 01738394309

Comments

Popular posts from this blog

Prof. Dr. Md. Abu Saleh Alamgir. BPT, MD, MPH, MDMR, PhD. Physiotherapy Medicine & Rehabilitation Consultant

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা এবং স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা- বি পি আর সি

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর। বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি - বি পি আর সি