আমাদের শোয়ার সময় কি রকম বালিশ ও বিছানা ব্যবহার করা উচিত - বি পি আর সি
আমাদের শোয়ার সময় কি রকম বালিশ ও বিছানা ব্যবহার করা উচিত
ভালো ঘুমের জন্য আদর্শ বিছানা ও বালিশের বিকল্প নেই। বিছানা ও বালিশ ঠিক না হলে ঘুমের ব্যাঘাতের পাশাপাশি হতে পারে অসুখও। ঘুমের জন্য বিছানাটা হওয়া চাই মনের মতো। বালিশটা হওয়া চাই যুতসই। অনেকেই শুধু চোখ ও মনের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে বিছানা ও বালিশ ঠিক করেন। এর সঙ্গে শরীরের আরামকেও বিবেচনায় নিন। শুধু আরামের কথা ভেবেই নরম কোমল বিছানায় বা বালিশে নিজেকে সঁপে দেবেন না।
শোয়ার বালিশঃ
মেসোপটেমিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস বলে, প্রায় নয় হাজার বছর আগে থেকেই ঘুমানোর সময় মানুষ বালিশ ব্যবহার শুরু করে। মিসরীয়রা বালিশ হিসেবে পাথর ব্যবহার করত। নরম বালিশ ব্যবহার শুরু হয় গ্রিস ও রোমে। বর্তমানে ঘুমানোর অনুষঙ্গ হিসেবে বালিশের বিকল্প ভাবাই যায় না। তবে ঘুমানোর জন্য কোন ধরনের বালিশ ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর, এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন।
সঠিক বালিশের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক বালিশের ব্যবহার না হলে ঘাড়, পিঠ, কোমড়, নিতম্ব, কাঁধ ও হাটু সহ বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা হতে পারে। বালিশ নির্বাচনে ফোম ব্যবহার না করে তুলার বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। বালিশ বেশি উঁচু হবে না, আবার খুব নিচুও হবে না।
কে কীভাবে ঘুমায় সেটার ওপর নির্ভর করে বালিশ নির্বাচন করতে হবে। এমনভাবে বালিশ ব্যবহার করতে হবে যেন মেরুদণ্ড সোজা থাকে। সাধারণত বালিশের উচ্চতা চার থেকে ছয় ইঞ্চি হতে পারে। তবে শারীরিক গঠন অনুযায়ী বালিশের উচ্চতা বাড়তে পারে। আমাদের দেশের বালিশগুলো সাধারণত শক্ত থাকে। এগুলো ব্যবহার ভালো। যেসব বালিশে মাথা একেবারে ডুবে যায়, সেগুলোর ব্যবহারে মেরুদণ্ডের অবস্থান ঠিক থাকে না। এগুলো তেমন স্বাস্থ্যকরও নয়।
সাধারণত আমরা তিনভাবে ঘুমাই।
কেউ কাত হয়ে, কেউ চিত হয়ে এবং কেউ উপুড় হয়ে ঘুমাই।
কাত হয়ে শুলে খেয়াল রাখতে হবে ঘাড় এবং কাঁধে যেন দূরত্ব থাকে। কাত হয়ে শুলে বালিশ একটু উঁচু হতে হবে। যেন মেরুদণ্ড একই লেভেলে থাকে। এ ক্ষেত্রে একটু শক্ত বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। এ ছাড়া কাত হয়ে শুলে দুই হাঁটুর মাঝখানে বালিশ দিয়ে শোয়া ভালো। এতে মেরুদণ্ড সাপোর্ট পাবে।
চিত হয়ে শুলে অনেকে মাথার নিচে দুটো বালিশ দেয়। এটি ঠিক নয়। এতে মাথা উঁচু হয়ে থাকে এবং কাঁধে ব্যথা হতে পারে। একটি বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। এ ছাড়া চিত হয়ে শুলে হাঁটুর নিচে একটি বা দুটো বালিশ রাখা যেতে পারে।
আর উপুড় হয়ে শুলে একটু পাতলা বা নরম বালিশ ব্যবহার করতে হবে; এই বালিশের উচ্চতা কম হলে ভালো হয়। যেন ঘাড় এবং মাথা কাছাকাছি থাকে।
এক থেকে দেড় বছরের বেশি কোনো বালিশ ব্যবহার করা ভালো নয় । দুই বছর হলে অবশ্যই বালিশ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। উলের বালিশ, সিনথেটিক বা ফোমের বালিশ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। তুলার বালিশ ব্যবহার করা ভালো। যদি কোনো কারণে বালিশ বেশি নরম হয়ে যায় তখন সেটি পরিবর্তন করতে হবে। শোয়ার সময় মেরুদণ্ডের অবস্থান যেন সোজা থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
সারভিকাল কনট্যুর পিলো’ নামের এক বিশেষ ধরনের বালিশ কিনতে পাওয়া যায়। এর যে অংশটি ঘাড়ের নিচে থাকে, তা একটু উঁচু এবং বাঁকানো ধরনের হয়। ঘাড় ব্যথার রোগীদের জন্য এটি বিশেষ উপযোগী ও আরামদায়ক।
শোয়ার বিছানাঃ
শক্ত, সমান বিছানায় ঘুমানো উচিত। ফোম বা স্পঞ্জের বিছানা চাপ লাগলে সহজেই দেবে যায়। এমন বিছানা স্বাস্থ্যকর নয়। বরং শক্ত জাজিমের ওপর পাতলা তোশক বিছিয়ে ঘুমাতে পারেন। পুরোনো জাজিমও চাপ লাগলে দেবে যেতে পারে। তাই জাজিম পুরোনো ও নরম হয়ে গেলে পাল্টানো উচিত। সেটা না পারলে জাজিমের ওপর হার্ডবোর্ড দিয়ে এর ওপর একটা পাতলা তোশক বিছিয়ে নিতে পারেন।
পিঠ বাঁকা করে ঘুমানো ঠিক নয়। এতে পরবর্তী সময়ে পিঠে ব্যথা হতে পারে। কোলবালিশ নিয়ে খুব বাঁকা হয়ে ঘুমালেও পিঠ ব্যথা হতে পারে। মেরুদণ্ড খুব বেশি না বাঁকিয়ে যেকোনো পাশে কাত হয়ে ঘুমানো ভালো।
আরামের জন্য সুতি কাপড়ের চাদর বেছে নিন। সঠিক আকৃতির বালিশও আদর্শ বিছানার অনুষঙ্গ। খুব ছোট কিংবা খুব বড় বালিশে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে বাধ্য। তাই আপনার পছন্দমতো সাইজের বালিশ বেছে নিন। বাজারে লার্জ, মিডিয়াম, স্ট্যান্ডার্ড, কিং, কুইন ইত্যাদি আকারের বালিশ পাওয়া যায়। বালিশের উচ্চতা এমন হবে, যাতে আপনার ঘাড় ও কাঁধ বেঁকে না যায়। ফোমের বালিশের চেয়ে প্রাকৃতিক তুলায় তৈরি বালিশ বিছানার জন্য বেছে নিন। ফোমের বালিশ বেশি নরম হলেও ঘুমের জন্য আরামদায়ক নয়। বালিশের কাভার সুতি কিংবা সিল্কের হওয়া ভালো। এতে মাথার চুল ও মুখের ত্বক ভালো থাকে। ঘুমানোর সময় একটি বালিশ ব্যবহার করুন। যাঁদের ঘাড়ে ব্যথা, তাঁরা ঘাড়ের নিচে ছোটদের কোলবালিশ ব্যবহার করতে পারেন। সারভিক্যাল কনট্যুর নামে এক ধরনের বালিশ কিনতে পাওয়া যায়, যেটি ঘাড় ব্যথার রোগীদের জন্য বিশেষ উপযোগী ও আরামদায়ক। ঘাড়ে ব্যথা হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে এই বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন। এভাবে ঘুমানোর সময় পিঠ বাঁকা হয়ে থাকলে পিঠ ব্যথা হতে পারে। তারা পিঠ বেশি না বাঁকিয়ে যেকোনো পাশে কাত হয়ে ঘুমান।
শুধু বিছানা ভালো হলেই কিন্তু চলবে না। মনের মতো বিছানা এমন ঘরে স্থাপন করলেন, যেখানে কোনো আলো-বাতাসই নেই। শোয়ার ঘরটি এমন স্থানে হওয়া উচিত, যেখানে খোলা হাওয়া খেলবে। বিছানাকে এমন ঘরে স্থাপন করুন, যেখানে বাইরের কোলাহল কম পৌঁছে। বিছানার পাশেই এসি রাখবেন না। একটু দূরে রাখুন। খেয়াল রাখবেন, এসি থেকে যেন কোনো আওয়াজ না বের হয়। বিছানা আকর্ষণীয় করে তুলতে ঘরে সুগন্ধী স্প্রে করুন। এমন স্প্রে বেছে নিন, যেটা আপনার মন ভালো করে তোলে। বিছানায় আদর্শ ঘুমের জন্য ঘরে হালকা ভলিউমে ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক ছেড়ে দিতে পারেন।
বিছানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। আমাদের অগোচরেই বিছানায় নানা কারণে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী অণুজীব তৈরি হয়। যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝাড়েন বা পরিস্কার করুন। সকালে বিছানা ছাড়ার পর বিছানা ঝাড়মোছ করে রাখুন। চেষ্টা করুন সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার গরম পানিতে ধুয়ে নিতে। আর তোশক-জাজিম বা ম্যাট্রেস—যা-ই ব্যবহার করুন, মাসে একবার কড়া রোদে সারা দিন রাখুন।
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর
বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি
চেম্বারঃ বাংলাদেশ পেইন, ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (বি পি আর সি)
মালিবাগ মোড়, ঢাকা-১২১৭
এ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্যঃ ০১৬৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭৩৮৩৯৪৩০৯
Comments
Post a Comment