কি কি খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় - বি পি আর সি
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। ভিটামিন ডি আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য অনেক জরুরি। হাড়ের গঠনের জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম, আর এই ক্যালসিয়ামকে শরীরের জন্য উপযোগী করে ভিটামিন ডি।
এছাড়া, ভিটামিন ডি প্রোটিন তৈরিতেও সহায়তা করে। পৃথিবীতে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ভিটামিন ডি জনিত সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশের মানুষেরাও বর্তমানে ভিটামিন ডি জনিত সমস্যা অনেক বেশি ভুগছে। যেমন, হাড় ক্ষয়, শিশুদের হাড় বেকে যাওয়া, মাথার খুলি বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি
আমাদের প্রকৃতিতে রয়েছে, অসংখ্য ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার। আমাদের অবহেলা এবং না জানার কারণে আমরা ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আজকে আমরা বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র থেকে বেশ কিছু খাবারের তালিকা তৈরি করেছি।
কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি আছে?
কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি আছে এটা জানার আগে, সবার জেনে রাখা ভাল, খাবার ছাড়াও সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর অন্যতম প্রধান উৎস। কেননা, ৮০% ভিটামিন ডি আসে সূর্য থেকে। গবেষণায় দেখা গেলে সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত রোদে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। রোদে খুব বেশি সময় থাকা জরুরি নয় বরং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট থাকলেই যথেষ্ট। সাধারণত, সানস্ক্রিন মেখে, পোশাকের মধ্যে কিংবা কাচের দেয়ালের মাধ্যমে ভিটামিন ডি পৌছাতে পারে না। তাই, নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট সময় শরীরে রোদের আলো দিন। এবার আসুন জানি,
ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার কি কি:
- সামুদ্রিক, তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত মাছ
- ডিমের কুসুম
- মাশরুম
- কমলার জুস
- দুধ
- ওটমিল
- গরুর কলিজা
- পনির, মাখন, ছানা, দই
- গম, রাগী, বার্লি
- বাদাম
তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত মাছ
স্যামন মাছ, টুনা মাছ এবং পাঙ্গাশ মাছ সহ সামুদ্রিক অধিকাংশ মাছে ভিটামিন ডি রয়েছে। এর মধ্যে সেলমন তথা স্যামন মাছে ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি বেশি। USDA এর ডাটাবেজের তথ্য মতে প্রতি ১০০ গ্রাম সেলমন মাছে ৫২৬ IU ভিটামিন ডি রয়েছে। আর এটা প্রতিদিনের ৬৬% ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণে যথেষ্ট।
ডিমের কুসুম
যারা মাছ খেতে অপছন্দ করেন তারা চাইলে, ডিমের কুসুম খেতে পারেন। একটি ডিমের কুসুমে ৩৭ আইউ ভিটামিন ডি রয়েছে। যা কিনা প্রতিদিনের ৫% ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
হাই ব্লাড প্রেশার কিংবা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
মাশরুম
আপনি হয়তো বলতে পারেন আমার মাছ কিংবা ডিমের কুসুম খেতে ভাল লাগেনা। তাহলে, আপনার জন্য মাশরুম উপযুক্ত। মাশরুম ভিটামিন ডি ২ সরবারহ করে। আর প্রাণী থেকে আমরা পাই ভিটামিন ডি ৩। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে সাধারণত ১৩০ থেকে ৪৫০ আইউ পর্যন্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।[৩]
কমলার জুস
কমলার জুস খুব কম মানুষের অপছন্দ। কম বেশি সবাই কমলার জুস খেতে পছন্দ করে। অনেকের আবার দুধ কিংবা ডিমে এলার্জি আছে। তারা চাইলে, কমলার জুস খেয়ে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে পারেন।
আপনি যদি প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে কমলার জুস খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে, প্রতিদিনের ভিটামিন ডি এর ১২% ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। কেননা এক গ্লাস কমলার জুসে ১০০ আইন ভিটামিন ডি রয়েছে।
দুধ
ছোট বেলা তো আমরা দুধ খেতাম না। কিন্তু এই দুধ আমাদের হাড়ের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বুদ্ধির বিকাশে পর্যন্ত জরুরি। অনেকে বলতে পারেন গরুর দুধ খেয়ে গরুর তো কোন বুদ্ধির বিকাশ হয় না আমাদের হবে কিভাবে? আসলে গরুর মস্তিষ্কের বুদ্ধির সীমানা এই সবুজ ঘাস পর্যন্ত। কিন্তু মানুষের এই সীমানা অনেক ব্যাপক।
যাই হোক, প্রতি দিন এক গ্লাস দুধ আমাদের ১৫ থেকে ২২% ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।
পনির, মাখন, ছানা, দই
পনির, মাখন, ছানা কিংবা দইয়ে রয়েছে ভিটামিন ডি। আমরা অবশ্য পূর্বেই উল্লেখ করেছি দুধের ভিটামিন ডি আছে। এক কাপ দই আমাদের শরীরের ১৬% ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে সক্ষম।
গরুর কলিজা
গরুর কলিজাতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে, অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়।
ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ?
সব জিনিসের অভাবের লক্ষণ বোঝা যায়। ভিটামিন ডি এর ক্ষেত্রেও এটা ব্যতিক্রম নয়। ভিটামিন ডি অভাবের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো:
ঘন ঘন এবং খুব বেশি মাথা ঘামানো।
শরীরে অবসাদ এবং ক্লান্তি আসা। এমন না যে আমি ঘুমাইলে আপনার শরীরে চনমন একটা ভাব আসবে। ডি এর অভাব হলে পর্যাপ্ত ঘুমের আপনার অবসাদ বা ক্লান্তি যাবে না।
আগেই উল্লেখ করেছি ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে অবসাদ ও ক্লান্তি-ভাব থাকে সব সময়। আর এই ক্লান্তি এবং অবসাদের কারণে একধরণের মানসিক উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা এবং হতাশা কাজ করে। কেননা, ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের মস্তিষ্ক ডোপামিন ও সেরোটোনিন এর মত আনন্দ দেয়ার মত হরমোনগুলো উৎপাদন হতে পারে না।
হাড়, দাঁত কিংবা বেশিতে ব্যথা হওয়া ভিটামিন ডি এর অন্যতম একটি লক্ষণ। কেননা, ভিটামিন ডি হাড় গঠনের অন্যতম নিয়ামক।
ভিটামিন ডি এর অভাব হলে, মাথার চুল পড়ে যেতে থাকবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।
ভিটামিন ডি ৩ এর কাজ কি?
ভিটামিন ডি সাধারণত সূর্যের আলো থেকে উৎপাদিত হয়। ভিটামিন ডি ৩ আমাদের অস্টিওম্যালেশিয়া, অস্টিওপোরোসিস কিংবা শিশুদের হাড় বেকে যাওয়ার-মত ভয়ংকর রোগ থেকে রক্ষা করে।
প্রশ্ন আসতে পারে, ভিটামিন ডি আর ভিটামিন ডি ৩ এর মধ্যে পার্থক্য কি? আসলে, উৎসের কারণে পার্থক্য। ভিটামিন ডি মোটামুটি সকল কম ব্যয়বহুল খাবারেই পাওয়া যায়। কিন্তু ভিটামিন ডি ৩ সূর্যের আলো এবং বিভিন্ন প্রাণীজ খাবার যেমন মাছের তেল, কলিজা, ডিমের কুসুম থেকে আসে।
ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়?
প্রয়োজনের বেশি কোন কিছুই ভাল না। ভিটামিন ডি বেশি খেলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন,
ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
হজমে সমস্যা হতে পারে।
বমি হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্লান্তি আসা।
কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।
Comments
Post a Comment