ধর্ম ও ইসলাম

ধর্ম বলতে আমরা কি বুঝি : ধর্ম মানে  একজন মানুষ তার অর্জন করা প্রকৃত সু-শিক্ষা ও তার জ্ঞানের মাধ্যমে তার সৃষ্টি কর্তাকে চিনবে এবং সৃষ্টি কর্তার তৈরি এ পৃথিবীতে  তারই পাঠানো নিয়ম, নীতি ও শৃঙ্খলা অনুসারে চলবে। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে প্রত্যেক কিছুর ধর্ম আছে, যেমন সূর্যের ধর্ম পৃথিবীতে আলো দান করা, চম্বুকের ধর্ম আকর্ষণ করা। তেমনি মানব জীবন গঠনেও মানবের মানব ধর্ম রয়েছে। মানবের যদি জীবনাচরণে নিয়ম, নীতি ও শৃঙ্খলা না থাকে তবে সে পশুর সমতুল্য। মানবের মানব ধর্ম রক্ষা করতে হলে মানবের প্রথম আত্ন শুদ্ধিতা রক্ষা করতে হবে। আত্নশুদ্ধি মানে জীবনাচরনে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা। মানব যতদিন পর্যন্ত সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত ধর্ম নামে সত্যটা তার অন্তরে প্রবেশ করবে না।
 
আল্লাহ কে এবং আল্লাহর ধর্ম কোনটি : আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনিই একমাত্র উপাস্য। তিনিই কেবল আরাধনার যোগ্য। তাহলে এতগুলো ধর্ম পৃথিবীতে এলো কী করে? সন্দেহ নেই, ধর্মের উৎস আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু মানুষ আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গিয়ে, আল্লাহর নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে তার দেয়া ধর্মে এবং সেই ধর্মীয় হুকুম-আহকামে নিজেদের পার্থিব সুবিধার্থে নানা ধরনের সংযোজন-বিয়োজন করেছে। যারা এমন কাজ করেছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো একটাই, একে অন্যের ওপর ক্ষমতাবান হয়ে যাওয়া। তারা আসলে আল্লাহর আধিপত্য ও ক্ষমতার কথা ভুলে গিয়েছিলো। তাদের সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করেছে, আজ তারা তোমাদের দীনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেছে। সুতরাং তোমারা তাদের ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য দীন বা ধর্ম হিসেবে ইসলামকে পছন্দ করলাম। (সুরা মায়িদা, আয়াত ৩) এটা এ কারণেই হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা কাউকে ইসলাম পালনে বাধ্য করেন না। তিনি শুধু মানুষকে দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একটি জান্নাতের ও আরেকটি জাহান্নামের। আর মানুষকে দিয়েছেন বুদ্ধি-বিবেক। আর দিয়েছেন অবাধ স্বাধীনতা। যেনো সে তার নিজের পছন্দের পথ বেছে নিতে পারে। এ জন্যেই তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দীন গ্রহণে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হেদায়েত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্তি থেকে।....যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি অন্ধকার থেকে তাদের আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরি করে, তাদের অভিভাবক হলো শয়তান। তারা আলো থেকে তাদের বের করে নেয় অন্ধকারের দিকে। তারা জাহান্নামের বাসিন্দা, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৬-২৫৭) আসলে সত্যকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর পক্ষ হতে দেওয়া সুস্পষ্ট প্রমাণাদিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়ার কারণেই মানুষ বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ে বিভক্ত হতে শুরু করেছে। যেমন কোরআনে এসেছে, ‘আর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরই মতভেদ করেছে। অথচ তাদের শুধু নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো, যেনো তারা আল্লাহর ইবাদত করে।’ (সুরা বায়্যিনাহ, আয়াত ১-৩)
আল্লাহ তায়ালা তো একক সত্তাই। তিনি মানুষের জন্যে একক বিধানই অবতীর্ণ করেছিলেন। কিন্তু কিছু মানুষ নিজেরাই আল্লাহর প্রেরিত অহি সম্পর্কে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে, তারা আল্লাহর অবতীর্ণ গ্রন্থসমূহ নিজ হাতে পরিবর্তন করেছে, তারা নবিদের নির্যাতন করেছে। এমনকি বহু নবিকে তারা হত্যাও করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা নিজেদের জিহ্বা বিকৃত করে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা সেগুলোকে কিতাবের অংশ মনে করো, অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৮) এভাবেই একসময় মানব রচিত নানা ধর্ম মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ মানবরচিত ধর্ম আল্লাহর কাছে সবচে’ অপছন্দনীয় বিষয়, যা কোনোকালেও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য কিছু অনুসন্ধান করছে? অথচ আকাশ ও পৃথিবীতে যা আছে তা তাঁরই আনুগত্য করে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৩) আল্লাহ প্রেরিত নবিদের মিশন ছিলো, সব মানুষকে এক আল্লাহমুখী করা, সবাইকে এক আল্লাহর বিধানের দিকে ডাকা। তারা সবাই একত্ববাদি ছিলেন। কিন্তু মানুষ নিজেরাই আল্লাহর পথ ছেড়ে ভ্রষ্টতা পথ ধরেছে। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।
 

Comments

Popular posts from this blog

Prof. Dr. Md. Abu Saleh Alamgir. BPT, MD, MPH, MDMR, PhD. Physiotherapy Medicine & Rehabilitation Consultant

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা এবং স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা- বি পি আর সি

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর। বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি - বি পি আর সি